আইন অমান্য করে তরমুজ কেজিতে বিক্রি, দেখার কেউ নেই?
- Update Time : ১১:১৯:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল ২০২১
- / ১ Time View
দিদারুল আলম :
খুচরা বিক্রেতা, শপিংমল সর্বত্রই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে।
ভোক্তা অধিকার আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যে পদ্ধতিতে ক্রয় সেই নিয়মেই পণ্য বিক্রি করতে হবে। কৃষক থেকে পাইকাররা পিস হিসাবে তরমুজ কেনেন। কিন্তু বেশি লাভের আশায় খুচরা বাজারে অন্যায়ভাবে সেই তরমুজ কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে মৌসুমি এই ফলটি। চলতি সময়ে প্রচন্ড তাপ দাহ ও পবিত্র রমজানকে পূঁজি করে অসাধু মহল তথা সিন্ডিকেট তরমুজের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বিপুল ব্যবসা করছেন। ৭-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ৪’শ থেকে ৬’শ টাকায়। পাইকারি বাজারে এই সাইজের তরমুজের দাম সর্বোচ্চ ২’শ থেকে ২২০ টাকা। উৎপাদক পর্যায়ে গেলে তা আরও কম। পুরো বিষয়টিকেই খুচরা বিক্রেতা ও শপিংমল কর্তৃপক্ষের কারসাজি বলছেন পাইকার আর তরমুজ চাষিরা।
এ বছরই প্রথম এই পদ্ধতিতে তরমুজ বিক্রি চলছে সারা দেশে। কী করে এই সিন্ডিকেট তৈরি হলো তারও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা সূত্র পাওয়া যায়নি। মাঝখান থেকে দেশেই উৎপাদিত এই সুমিষ্ট ফলটির স্বাদ পাওয়া কেজি হিসেবে বিক্রির কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
দেশে পিস হিসাবেই কেনাবেচা হতো তরমুজ। উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত ছিল একই পদ্ধতি। কৃষক যেমন পাইকারদের কাছে পিস হিসাবে বিক্রি করত, তেমনি পাইকারও খুচরা বিক্রেতার হাতে একই পদ্ধতিতে তুলে দিত। খুচরা বিক্রেতারাও পিস হিসাবেই বিক্রি করত সাধারণ ক্রেতার কাছে। এ বছর কৃষক থেকে পাইকার পর্যন্ত এই পদ্ধতি বহাল থাকলেও গোল বাঁধিয়েছে খুচরা বিক্রেতারা। কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছে তারা। এই দৃশ্য এখন সারা দেশে। ফলে কৃষকের বিক্রিত মূল্যের সাথে পাইকারের হাত ঘুরে খুচরা বিক্রিতা বা শপিংমল গুলোতে তরমুজের দাম দ্বিগুণ ও ত্রিগুণ পর্যন্ত দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশে উৎপাদিত মোট তরমুজের শতকরা ৬৪ ভাগই উৎপাদন করে বরিশাল অঞ্চলের চাষিরা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর এবং বরিশালে তরমুজের উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তরমুজ উৎপাদন হলেও সমুদ্র তীরবর্তী নোনা পানির এলাকা হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদিত তরমুজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কেননা এই অঞ্চলের তরমুজ অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি মিষ্টি। উৎপাদনে প্রথম সারিতে থাকা পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বেশ কয়েকজন তরমুজ চাষির সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও ক্ষেত কিংবা সংখ্যার হিসাবে পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেছেন তারা। এক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের একেকটি তরমুজের দাম পড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অথচ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায় কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন খুচরা বিক্রিতাগন। অর্থাৎ ৬০ টাকার তরমুজ কিনতে হচ্ছে হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, ‘বিক্রির পদ্ধতি সম্পর্কে আইনে কিছু বলা না থাকলেও পাইকারি দরের চেয়ে খুচরা বাজারের দরে কতটা পার্থক্য থাকতে পারে তা স্পষ্ট বলা আছে। তরমুজের ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে সেটা পুরোপুরি বেআইনি। দামের এতটা পার্থক্য করে পণ্য বিক্রির কোনো বিধান ভোক্তা অধিকার আইনে নেই।’
প্রকাশ্যে আইন লংঘন করে তরমুজ বিক্রির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পকেট খালি করলেও বিষয়টি নিয়ে এতোদিন আইনগত পদক্ষেপ বা মনিটরিং করতে কোনো কর্তৃপক্ষকে তৎপর দেখা যায়নি। বিভিন্ন গনমাধ্যমে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার হয়।
তবে জানা গেছে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজশাহীতে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরূপ পদক্ষেপ দেশব্যাপী নেয়া হবে এটিই প্রত্যাশা। যেন মানুষকে বলতে না হয়, ‘আইন অমান্য করে তরমুজ কেজিতে বিক্রি, দেখার কেউ নেই?’
ডিএএম//