কলকাতা প্রতিনিধি :
বাঙালি অধ্যুষিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধান সভা নির্বাচনের আজ ২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফা ভোট।
বাংলায় ৫ দফার ভোটগ্রহণ শেষ। ষষ্ঠ দফায় রাজ্যের চার জেলার ৪৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ আজ ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার।
তার মধ্যে রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ৯, নদিয়ার ৯, পূর্ব বর্ধমানের ৮ এবং উত্তর ২৪ পরগনার ১৭টি আসন। ষষ্ঠ দফায় কিন্তু রুপোলি পর্দার তারকাদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন রাজনীতির তারকারা। এই দফায় ভাগ্য নির্ধারিত হবে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীরও।
মূখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, এ নির্বাচনটি বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ধরে রাখার লড়াই। কেননা কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন বিজেপি এ রাজ্য দখলে মরিয়া হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। রাজ্যে তারা নানা বিভক্তি ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তার। নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিজেপি প্রভাবিত করছেন বলে দাবী মমতার।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে ও রাজ্যে ডাবল ইন্জিনের সরকার গড়তে রাজ্যবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে এ রাজ্যকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়তে অঙ্গিকার করেছে বিজেপি।
দেখে নেওয়া যাক ষষ্ঠ দফায় কাদের উপরে থাকছে নজর। রাজ্যের নদিয়ার কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের প্রতিপক্ষ বিজেপি-র মুকুল রায়। নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়ে টিকিট পেয়েছেন কৌশানী। একদা তৃণমূলের দুঁদে সংগঠক, বর্তমানে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে লড়াই তাঁর। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হলেও ভোটের ময়দানে বিশেষ ‘পরীক্ষিত’ নন মুকুল। ২০০১ সালে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়িয়ে হারতে হয়েছিল তাঁকে। দীর্ঘ ২০ বছর পরে ফের ভোটে লড়ছেন তিনি।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ৪ বারের বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দু’দফায় গাইঘাটা ও দু’দফায় হাবরা থেকে জিতেছেন তিনি। এ বার পঞ্চম বার বিধায়ক হওয়ার লড়াইয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপি-র রাহুল সিংহ। রাজনীতির ময়দানে বহু দিন ধরে গেরুয়া পতাকা ধরে থাকলেও রাহুলের ভোট-ভাগ্য কখনও প্রসন্ন হয়নি। এ বার তাঁকে হাবরায় টিকিট দিয়েছে দল। বার বার বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে থাকা রাহুলের সামনে এখন কঠিন লড়াই।
উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে এ বার তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। উত্তর ২৪ পরগনারই দমদম উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূল ফের প্রার্থী করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। ২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হলেও ২০১৬-র বিধানসভায় হেরে যান চন্দ্রিমা। পরে দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জিতে মন্ত্রী হন তিনি। এ বার চন্দ্রিমার লড়াই বিজেপি-র অর্চনা মজুমদারের বিরুদ্ধে।
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক স্বপন দেবনাথকেই ফের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ২০০১ সালে অধুনাবিলুপ্ত বর্ধমানের নাদনঘাট কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হওয়া স্বপন এ বার পঞ্চম বারের জন্য বিধায়ক হওয়ার লড়াইয়ে। তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপি-র রাজীবকুমার ভৌমিক।
২০১৫ সালে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০১৬-য় বর্ধমানের কাটোয়া থেকে বিধায়ক হন রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এ বারও সেখানেই প্রার্থী তিনি। তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপি-র শ্যামা মজুমদার।
পিতাপুত্র একই দিনে ভোট যুদ্ধে :
মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায় ২০১১ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরের বিধায়ক। বাবার পরে তিনিও গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। এ বার বীজপুর থেকেই বিজেপি-র টিকিটে লড়ছেন তিনি। প্রতিপক্ষ তৃণমূলের সুবোধ অধিকারী।
তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে টিকিট পাওয়া বিধায়কদের তালিকায় আরও এক নাম শীলভদ্র দত্ত। ২০১১ সালে ব্যারাকপুর থেকে জিতেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহতে তাঁকে টিকিট দেয় তৃণমূল। সেই কেন্দ্রেই এ বার বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্রের প্রতিপক্ষ তৃণমূলের কাজল সিংহ।
নজর থাকবে উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আলি ইমরান রামিজের উপরেও। রাজনৈতিক মহলে ‘ভিক্টর’ নামে পরিচিত ইমরান ২০০৯ সালে কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাসমুন্সির ছেড়ে যাওয়া আসন গোয়ালপোখর থেকে উপনির্বাচনে জেতেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি চাকুলিয়ার বিধায়ক। এ বারও সেখানে তাঁকে টিকিট দিয়েছে বামফ্রন্ট।
ইতোমধ্যে শেষ হওয়া পাঁচ দফা ভোটে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ফের ক্ষমতা আসতে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন বক্তৃতায় দৃঢ় মনোবল প্রকাশ করছেন।
অপরদিকে পরিবর্তনের শ্লোগান তুলে কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে রাজ্যে সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ দলটি এ রাজ্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে নির্বাচনে বিজয়ে।
তাছাড়া লড়াই করছেন কংগ্রেস-বামসহ সংযুক্ত মোর্চা জোট।
২ মে নির্বাচনী ফলাফল জানা যাবে। রাজ্যবাসী তাদের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব কাদের হাতে দিলেন।
ডিএএম //
Leave a Reply