1. newsroom@saradesh.net : News Room : News Room
  2. saradesh.net@gmail.com : saradesh :
বেসরকারি হাসপাতালে লাগামহীন চিকিৎসা বিল থামান! - সারাদেশ.নেট
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার হাইকোর্টে ২৩ অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ খালাস পেলেন যুবদল নেতা আইনজীবী নুরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হলেন এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

বেসরকারি হাসপাতালে লাগামহীন চিকিৎসা বিল থামান!

  • Update Time : বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

দিদারুল আলম :
মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে এখন দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো।

সিট ও আইসিইউ খালি না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে ভর্তি হচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। তাই বেসরকারি হাসপাতালে এখন রোগীর ব্যাপক চাপ। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাড়তি চিকিৎসা ব্যয় নেয়া হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে চিকিৎসা শেষে বিল দিতে দিয়ে সংকটে পড়ছেন।

শুধু মহামারি করোনা সংক্রমণ জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতেই নয় বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে এটি নিত্য দিনের ঘটনা। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর অসুস্থতার সূযোগ কাজে লাগিয়ে বিল হাতিয়ে নেয়ার বহু ঘটনা গনমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হয়। অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।

সম্প্রতি প্রসববেদনা নিয়ে এক চিকিৎসক ভর্তি হন রাজধানীর গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে, সেখানে তিনি একরাত সাধারণ ওয়ার্ডে ছিলেন। পরদিন প্রায় ৩০ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয় এ অন্তঃসত্ত্বা চিকিৎসকের চিকিৎসায় ঔষধ লেগেছে তাই এতো বিল। একদিনের মাথায় ওই চিকিৎসক আবারো অসুস্থ হলে ফের তাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়া হয়। বিলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তিনি সেখানে সংযুক্তা সাহা নামে এক গাইনি চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, ডা: সংযুক্তা সাহাকে দেখাতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। পরে ওই চিকিৎসকের রাজধানীর আদ্ব-দীন হাসপাতালে পুত্র সন্তান হয়। তিনি সারাদেশ’কে জানান, রোগীর ঔষধ বিষয়ে তার অভিভাবকের সাথে আলাপ না করেই বিলে একটি বড় অংক আদায় করে নেন হাসপাতালটি। সরেজমিনও বিভিন্ন রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘এইতো গেলো ছোট্ট একটা উদাহরণ।’

রাজধানীর গুলশান-২ এর বাসিন্দা মরিয়ম খাতুন। ১০ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হন। বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শারীরিক অবস্থা একটু খারাপ হলে গত ১৪ এপ্রিল ভর্তি হন তেজগাঁওয়ের সরকার নির্ধারিত বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড ইমপালস হাসপাতালে। ২০ এপ্রিল সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। কিন্তু যাওয়ার সময় হাসপাতালের বিল দেখে মাথায় হাত! এ ছয় দিনে তারা বিল ধরিয়ে দিয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭২৬ টাকা। কিছুটা অবাক হয়ে মরিয়ম খাতুন বলেন, কেবিনে ছিলাম না। ছিলাম ছয় রোগীর একটি সাধারণ ওয়ার্ডে। তারপরও এত টাকা বিল!

মরিয়ম খাতুনের চিকিৎসার বিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা তথা ল্যাব টেস্ট বাবদ ৩০ হাজার ৭২০ টাকা। মোট হাসপাতাল চার্জ এক লাখ ৪০ হাজার ৫৪০ টাকা। বিশেষ কোনো সার্ভিস না থাকলেও সার্ভিস চার্জ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৭৫ টাকা। মেডিসিন বিল ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২৬১ টাকা। এছাড়া ফিক্সড বিল নামে আরও একটি অজ্ঞাত বিল ধরা হয়েছে ৮২ হাজার ২৫০ টাকা। সবমিলিয়ে মোট বিল এসেছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭২৬ টাকা।

মরিয়ম খাতুন বলেন, তাদের কিছু টাকা কম রাখার অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। ভর্তি যখন হয়েছি, কী আর করব বাবা! বিল তো দিতেই হবে। না দিলে দেখা যাবে বিলের জন্য আমাকে আটকে রেখেছে!

ইমপালস হাসপাতালের চিকিৎসা বিল নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ ৩০ হাজার ৭২০ টাকা। মোট হাসপাতাল চার্জ এক লাখ ৪০ হাজার ৫৪০ টাকা। বিশেষ কোনো সার্ভিস না থাকলেও চার্জ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৭৫ টাকা। মেডিসিন বিল ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২৬১ টাকা। এছাড়া ফিক্সড বিল নামে আরও একটি (অজ্ঞাত) বিল ধরা হয়েছে ৮২ হাজার ২৫০ টাকা। সবমিলিয়ে মোট বিল এসেছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭২৬ টাকা।

এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আসেন ইমপালস হাসপাতালে। চারদিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। এর মধ্যে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থাকতে হয় দুদিন। অবশেষে মা সুস্থ হলেও হাসপাতালের বিল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তিনি বলেন, দুদিনে শুধু অক্সিজেন ব্যবহার করে আইসিইউ বিল দিতে হয়েছে দুই লাখ টাকা। চিকিৎসার নামে আমাদের গলাকাটা হয়েছে এখানে। ডাকাতি বললেও ভুল হবে, এর চেয়েও বেশী।

হাসপাতালটির অপারেশন ম্যানেজার মো. জিলানীকে বিল প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে হাসপাতালের ভেতরে এসব নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেন। এমনকি কাউন্টারে বসা কর্মীদেরও এসব নিয়ে কোনো তথ্য দিতে নিষেধ করেন হাসপাতালটির এই অপারেশন ম্যানেজার।

রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে বিলের বিযয়ে এরূপ অসংখ্য উদাহরণ নিত্য দিনের।

ভুক্তভোগী একটি পরিবারের অভিযোগ রাজধানীর গুলশানের একটি হাসপাতালে করোনা রোগীকে ভর্তি করিয়ে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ গুনতে হয়েছে। তবে ওই পরিবার এ বিষয়ে আর গনমাধ্যমে বেশী কিছু বলতে চাননি। তারা বেসরকারি হাসপাতালগুলো মনিটরিং এর জন্য সরকারকে নজর দিতে গুরুত্বারোপ করেন।

গ্রিন লাইফ হাসপাতালে সম্প্রতি সাহারুন নামে এক রোগী ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আসেন। ৭৮ বছর বয়সী এ রোগীকে অপারেশন করা হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রায় চার লক্ষ টাকায় রোগীকে অপারেশনসহ চিকিৎসা প্যাকেজ দেন। রোগীর পুত্র রাসেল দাবী করেন, তার পিতার ভুল চিকিৎসা হয়েছে সেখানে। চিকিৎসক ৭ দিনের চিকিৎসার কথা বলে ভর্তি করায়। সেখানে তার পিতাকে প্রায় তিন মাস রাখা হয় এবং সেখানেই তার পিতার মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতাল থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বিলের কথা বলা হয়। তার পিতার ভুল চিকিৎসা এবং পিতার মৃত্যু সংবাদে তার এক নিকটাত্মীয় ঢাকায় পেশাদার সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা আরো সাংবাদিকসহ হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন টাকার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তার পিতার লাশ রিলিজ করে দেন।

পান্থপথের একটি হাসপাতালে থাকা রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, এখানে নরমাল ওয়ার্ডে থাকলেও প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ হাজার অথবা এর বেশিও খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া কেবিনে থাকলে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার এবং আইসিইউতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিল আসে।

রাজধানীর গুলশান ও গ্রীন রোডের দুটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিল নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠে। গ্রিন রোডের হাসপাতালটির একজন কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যয় ১,৭০,০০০ টাকা আসায় রোগীর স্বজনরা তা পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক দেন-দরবার করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১,৫০,০০০ টাকা বিল রাখতে সম্মত হয়। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের নজরে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে ১,২৭,০০০ টাকা ফিরিয়ে দেয়।

বিপদগ্রস্ত রোগী ও স্বজনদের হয়রানি ও অযৌক্তিক আর্থিক নিপিড়নের দৃষ্টান্ত এখন নিয়ম হয়ে গেছে! বেসরকারী হাসপাতালের বিল মনিটরিং জনস্বার্থেই এখন অপরিহার্য। মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে উল্টো আর্থিক নিপিড়নের শিকার আর কতো? চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় কিছুটা বেশী হবে এটি বাস্তবতা। কিন্তু বেশীটা কতো এবং কিভাবে? তার সুস্পষ্টতা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবী। এখানে ন্যায্যতা নিশ্চিতে লাগাম টেনে ধরা মানুষের দাবী রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

চলমান মহামারিকে পুজি করে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মহল অনৈতিক বানিজ্য করে যাচ্ছে। এটি সরকারের সংশ্লিষ্টদের নজরে আসবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন এটিই প্রত্যাশা।

ডিএএম//

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *