তানভীর আহমেদ, লন্ডন :
লণ্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আলোকসজ্জা নিয়ে আমরা অনেকই আপ্লুত হয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটস দিয়েছি, কিন্তু এই আয়োজনের কৃতিত্ব নিয়ে যে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে সেই ঘটনা আমরা অনেকেই জানি না।
ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘পত্রিকা’ লন্ডনের সুবর্ণজয়ন্তীর আলোকসজ্জ্বা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হয়েছে সাংবাদিকতা মরে নাই।
“লণ্ডনে সুবর্ণজয়ন্তীর আলোকসজ্জা : কৃতিত্ব দাবি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশ হাইকমিশন”
লণ্ডন, ০৫ এপ্রিল : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের আইকনিক ‘লণ্ডন আই’সহ টাওয়ার হ্যামলেটসের কয়েকটি ভবনে আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন আয়োজনের একক কৃতিত্ব দাবি করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। সেইসঙ্গে দূতাবাসের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যানারি ওয়ার্ফের একটি ভবনে আলোকসজ্জা হওয়ার তিনদিন আগেই ভুয়া ছবি প্রচারের কারণে হাইকমিশনের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিস্ময় এবং? প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে এই আয়োজনের অফিসিয়াল উদ্যোক্তা টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পীকার কাউন্সিলার আহবাব হোসেনের ফেইসবুকে একই ছবি প্রচারের বিষয়টি নিয়েও। এর ফলে ক্যানারি ওয়ার্ফের ভবনে আলোকসজ্জা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং আলোকসজ্জা দেখার পর অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন। এদিকে, প্রকৃত আয়োজকদের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার না করে সব কৃতিত্ব হাইকমিশনের দাবি করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য সাপ্তাহিক পত্রিকার তরফ থেকে এই কৃতিত্ব দাবির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর হাইকমিশন ইতোমধ্যে একটি সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি (রিভাইজড প্রেস রিলিজ) প্রচার করেছে। এতে ক্যানারি ওয়ার্ফের সুউচ্চ ভবনে আলোকসজ্জা যে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকারের অফিসের উদ্যোগে হয়েছে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু আগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও নানা আয়োজন ও আলোকসজ্জার ফিরিস্তি তুলে ধরে হাইকমিশনের যে কৃতিত্ব দাবি করা হয়েছিলো সেসবের কোনো উল্লেখ নেই। সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীমের বক্তব্যও বদলেছে। কী কারণে আগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বাতিল ঘোষণা করে সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হলো এবং এতে কেনোই বা একই বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য তুলে ধরতে হলো- তার কোনো ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে মহাসমারোহে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পাশাপাশি উদযাপন হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাজ্যে পূর্ব লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু ইতিহাস জড়িত। ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রবাসী ও বাংলাদেশি কাউন্সিলারদের দাবিতে সাড়া দেন মেয়র জন বিগস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই মাইলফলক উদযাপনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ৯ মাসব্যাপী নানা আয়োজনের ঘোষণা দেয়। এজন্য?নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ করে ৫০ হাজার পাউণ্ড। সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরে পুরো পরিকল্পনা।
গত ১৬ মার্চ কাউন্সিলের এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ মার্চ আলতাব আলী পার্কে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের পতাকা। টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলেও উড়ে লাল-সবুজের পতাকা। আলোকসজ্জা হয় ব্রোমলি টাউন হলে। আর ২৯ মার্চ ক্যানারি ওয়ার্ফের একটি ভবনে জ্বলে লাল-সবুজের আলো।
ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীমও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিশেবে আলতাব আলী পার্কে পতাকা উত্তোলনে অংশ নেন এবং অতিথি ছিলেন ক্যানারি ওয়ার্ফের আলোকসজ্জা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানেও।
কিন্তু ৩১ মার্চ লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব আয়োজনের ফিরিস্তি তুলে ধরে দাবি করা হয়, সবকিছু হাইকমিশনের একক উদ্যোগেই হয়েছে। আর এতে মূল আয়োজক টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস ও ক্যানারি ওয়ার্ফের কর্মকতাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে কেবল উপস্থিতির তালিকায়। প্রকৃত আয়োজকদের কাজ বা সংশ্লিষ্টতার কোনো স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি হাইকমিশনের এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
৩১ মার্চ প্রেরিত হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির চুম্বক অংশ
‘সোমবার সন্ধ্যায় ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপের সদর দপ্তর ‘ওয়ান কানাডা স্কয়ার’-এ বিশেষ আলোকসজ্জার উদ্বোধনের পর হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে লণ্ডনের ঐতিহাসিক টাওয়ার হেমলেটস-এর ক্যানারি ওয়ার্ফে লাল-সবুজের বিশেষ আলোকসজ্জার উদ্বোধন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। হাইকমিশনার উল্লেখ করেন যে ইতোমধ্যে লণ্ডন হাই কমিশনের উদ্যোগে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে, টাওয়ার হেমলেটস মেয়রের অফিস ‘টাউন হল’-এ এবং ব্রমলী পাবলিক হল-এ বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছে।”
‘ক্যানারি ওয়ার্ফের আলোকসজ্জা লণ্ডন হাই কমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনেরই একটি অংশ যা ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। একই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রখ্যাত ‘লণ্ডন আই’ আলোকিত হয়েছিল। এছাড়া ২৬ মার্চ হাইকমিশনার টাওয়ার হেমলেটসের মেয়র এবং স্পিকার-এর সাথে পূর্ব লণ্ডনের বিখ্যাত আলতাব আলী পার্কে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে নয় মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন করেন।”
টুইটারে ভুয়া ছবি প্রকাশ
লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন গত ২৬ মার্চ নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের কিছু ছবি প্রকাশ করে। এসব ছবির একটিতে দেখা যায়, ক্যানারি ওয়ার্ফের একটি ভবনজুড়ে লাল সবুজের আলো এবং বাংলাদেশের পতাকা। এতে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ‘হ্যাপি ফিফটিথ এনিভার্সারি বাংলাদেশ’। অথচ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯শে মার্চ ভবনটিতে আলোকসজ্জা হয়েছে। ওই আয়োজনের সাথে হাইকমিশন সংশ্লিষ্টতার কারণে তাদের ভালোভাবে বিষয়টি জানা থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন তিনদিন আগে ২৬ মার্চ আলোকসজ্জার ওই ভুয়া ছবি প্রচার করার কারণে সেটি নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মনে ধারণা জন্মে যে, ২৯ মার্চ হয়তো এমন করেই ভবনটির আলোকসজ্জা করা হবে। যে কারণে ২৯ মার্চ উৎসুক লোকজনও সেখানে ভীড়ও করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ক্যানারি ওয়ার্ফের দুটি উঁচু ভবনের উপরের পিরামিড অংশে আলাদা আলাদা করে লাল আর সবুজের বাতি জ্বালানো হয়েছে। এ ঘটনা আগ্রহী লোকজনকে চরমভাবে হতাশ করে যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে, বাংলাদেশ হাইকমিশন কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদের প্রকাশিত ছবিটি টুইটার থেকে সরিয়ে নেয়।
তবে এক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ হাই কমিশন নয়, টাওয়ার হ্যামলেটসের খোদ স্পীকারও তাঁর ফেইসবুকে একই ছবি ২৬শে মার্চ প্রচার করেন। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠেছে, নিজে উদ্যোক্তা হয়ে এই ভুয়া ছবি প্রচার করে তিনি কোন দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করলেন?
সাপ্তাহিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বক্তব্য টুইটার অ্যাকাউন্টে আলোকসজ্জার ছবি প্রসঙ্গে হাইকমিশন বলেছে, ‘২৬শে মার্চ ২০২১ দিবাগত রাতে বাংলাদেশ হাই কমিশন লণ্ডনের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন সংক্রান্ত বিভিন্ন বর্ণাঢ্য ছবির সাথে ক্যানারী ওয়ার্ফ-এর আলোকসজ্জা সদৃশ একটি ছবিও ভুলবশতঃ পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ছবির সাথে ক্যানারী ওয়ার্ফের আলোকসজ্জার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই জানার সাথে সাথে ছবিটি হাই কমিশনের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধিত পোস্টও ইতোমধ্যেই হাই কমিশনের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করা হয়েছে।”
অবশ্য এতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মত একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান কিসের ভিত্তিতে তিনদিন আগে ওই ভুয়া ছবি প্রকাশ করলো সে প্রশ্নের জাবাব মিলেনি।
ক্যানারী ওয়ার্ফে আলোকসজ্জা প্রসঙ্গে হাইকমিশন বলেছে, ‘আপনার উল্লেখিত ৩১ মার্চের বাংলাদেশ হাই কমিশন, লণ্ডনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি ইতোমধ্যেই স্থলাভিষিক্ত করে হাই কমিশন একটি সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গত ১ এপ্রিল ইস্যু করেছে। আপনার অবগতির জন্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি সংযুক্ত করা হলো যাতে ক্যানারী ওয়ার্ফে আলোকসজ্জার অনুষ্ঠানে লণ্ডন হাই কমিশনের ভূমিকা কী ছিলো তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ১ এপ্রিলের সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যানারী ওয়ার্ফে আলোকসজ্জা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ‘টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশি-ব্রিটিশ স্পিকার মোহাম্মদ আহবাব হোসেনের উদ্যোগে এ বিশেষ আলোকসজ্জাটি ছিল টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকারের অফিস, ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপ এবং বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা।”
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে হাইকমিশন বলেছে, বাংলাদেশ হাই কমিশন, লণ্ডনের উদ্যোগে ও সুনির্দিষ্ট অনুরোধে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। কমনওয়েলথ ও চার্চ অব ইংল্যাণ্ডের প্রধান ব্রিটেনের মহামান্য রাণীর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করা কমনওয়েলথভূক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতগণ চার্চ অব ইংল্যাণ্ডের আওতাভূক্ত ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেকে এ ধরনের অনুরোধ করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়েছে এমনটি নয়। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিশেষ প্রার্থনা এবং পতাকা উড়ানোর রীতি আছে। এর আগে বহুবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে পতাকা উড়েছে।
আয়োজনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশন দাবি করেছে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী বাংলাদেশ হাই কমিশন, লণ্ডনের সাথে যৌথভাবে উদযাপনের জন্য যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি অধ্যুষিত লণ্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস মান্যবর হাইকমিশনারকে একটি চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠালে হাইকমিশনার তাতে সম্মত হয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাথে নয় মাসব্যাপী যৌথভাবে আয়োজনের জন্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব সম্বলিত একটি তালিকা মেয়র অফিসকে প্রেরণ করেন। যার মধ্যে ছিলো শহীদ আলতাব আলী পার্কে যৌথভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন, টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ভবনকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙে আলোকসজ্জাসহ আরো কিছু প্রস্তাব।
সে অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে ২৬ মার্চ ২০২১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস এবং স্পিকার মোহাম্মদ আহবাব হোসেন-এর সাথে যৌথভাবে শহীদ আলতাব আলী পার্কে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে টাওয়ার হ্যামলেটস-এর সরকারি ভবনের আলোকসজ্জা হিসেবে ব্রোমলি পাবলিক হলে আলোকসজ্জা, টাউন হলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস-এর স্পিকারের উদ্যোগে ক্যানারী ওয়ার্ফে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় উচ্চত্তম ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়।’
তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস থেকে যে সংবাদ সম্মেলন এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে সেখানে কোথাও বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের উল্লেখ নেই। যৌথ উদ্যোগে সাধারণত যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। কিন্তু হাইকমিশন নিজে গত ৩১ মার্চ যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে সেখানেও যৌথ উদ্যোগের কথা বলেনি। বরং দাবি করেছে হাইকমিশনের উদ্যোগে সব হয়েছে। ১ এপ্রিল পাঠানো সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও যৌথ উদ্যোগের কথা বলা হয়নি। কেবল ক্যানারি ওয়ার্ফের আলোকসজ্জার কথা উল্লেখ করে তাতে বলা হয়েছে,
‘টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশি-ব্রিটিশ স্পিকার মোহাম্মদ আহবাব হোসেনের উদ্যোগে এ বিশেষ আলোকসজ্জাটি ছিল টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকারের অফিস, ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপ এবং বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা।”
প্রকৃত আয়োজকদের ক্ষোভ
একাধিক কাউন্সিলার বাংলাদেশ হাইকমিশনের অন্যায়ভাবে কৃতিত্ব দাবির তুমুল সমালোচনা করেছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলছেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বাংলাদেশ হাইকমিশনের স্বীকৃতি বা বাহবা কুড়াবার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে না। তারা প্রকৃত উদ্যোক্তাদের কথা স্বীকার না করুন। কিন্তু নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করলেন কোন যুক্তিতে? ইংরেজি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও তারা একই দাবি করেছেন। বিষয়টি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রশাসনে বেশ জানাজানি হয়েছে উল্লেখ করে এসব কাউন্সিলার বলেন, হাইকমিশনের এমন কাণ্ড বৃহত্তর কমিউনিটির মানষের কাছে জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা ক্ষুণœ করেছে। বিষয়টি নিয়ে তারা এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, ‘লণ্ডন আই’ তে আলোকসজ্জা হয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার অ্যাণ্ড ইন্সপিরেশন-১০০ বা বিবিপিআই এর প্রচেষ্টায়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা কাউন্সিলার আব্দাল উল্লাহ বলেন, বিবিপিআই১০০ সব সময় নতুন কিছু বড় কিছু করার চেষ্টা করে। সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লণ্ডন আই লাল-সবুজে আলোকিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে কনজারভেটিভের লণ্ডন বিষয়ক মিনিস্টার পল স্কালি বেশ সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, লণ্ডন আই-এর অফিসিয়াল টুইটে উল্লেখ আছে বিবিপিআই১০০ এর কথা। অন্য কারও কথাতো সেখানে নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রকৃত উদ্যোক্তাদের কথা স্বীকার করে একটু ধন্যবাদ জানালে বাংলাদেশ এবং হাইকমিশনের সম্মান বাড়তো ছাড়া কমতো না। (ফেইসবুক থেকে)
ডিএ//
Leave a Reply