Dhaka ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার

করোনর নতুন ধরণ : মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

  • Update Time : ০৯:৩০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ এপ্রিল ২০২১
  • / ০ Time View

সারাদেশ ডেস্ক :
দেশজুড়ে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। তা বেশ সংক্রামক এবং এর তীব্রতাও ভয়াবহ উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এতে মানুষ দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর লক্ষণ বা উপসর্গ আগের ধরনের চেয়ে কিছুটা আলাদা। এর কারণে মানসিক সমস্যা হচ্ছে রোগীদের। নতুন এ ধরনে নয়া চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার নতুন এই ধরনে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেশি।

আগের ধরনটিতে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল খুবই কম। এবারের ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে। ফলে অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোয় দেশে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
নতুন ধরনটিকে দেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’ বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগন।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি ইউকে’র ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বিপদজনক। এটি খুব দ্রুত ছড়ায়। এর বৈশিষ্ট্য হলো-সংক্রমণ অনেক বেশি। এটির বিরুদ্ধে আমাদের আগের ভ্যারিয়েন্টের অ্যান্টিবডি কাজ নাও করতে পারে। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পরামর্শক কমিটি আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা বৃদ্ধির কথা বলেছিল। কিন্তু করা হয়নি। আইসিইউ চালানোর মতো দক্ষ জনবলও নেই। বর্তমান সংক্রমণের গতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দেখে দেশে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এই বিশেষজ্ঞ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, প্রথম দফার তুলনায় এবারে রোগীদের একটি অংশের মধ্যে অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ার একটি প্রবণতা চিকিৎসকরা দেখতে পাচ্ছেন। অনেককে আক্রান্ত হওয়ার ৬/৭ দিনের মধ্যেই উচ্চমাত্রার অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তাও আবার সেটি তুলনামূলক দীর্ঘ সময়। যেমন ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্যাটার্ন আগের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। এবারে আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের উপসর্গ আরও প্রকট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অনেকের প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে বলে জানান। এবার নিউরোসাইক্রিয়াটিক সমস্যা, যেমন কারও কারও মধ্যে পাগলামি আচরণের প্রবণতা কিংবা ব্রেইন ইনফেকশনের মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের হাসপাতালে এমন অনেক রোগী তারা পেয়েছেন, যাদের রক্তের অনুচক্রিকার সঙ্গে হিমোগ্লোবিনও কমে যাচ্ছে-যদিও তাদের আগে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার রোগ বা রেকর্ড নেই। অথচ গত বছর প্রথম দফার সংক্রমণের সময় অনেকের রক্তের অনুচক্রিকা কমলেও তখন হিমোগ্লোবিনের সমস্যা রোগীদের মধ্যে পাইনি।

আর এসব নতুন ধরনের সমস্যার কারণে অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়ে অনেককে খুব তাড়াতাড়ি আইসিইউতে নিতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চলতি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা একটু খারাপ হলে তা দ্রুতই খারাপতর হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে আইসিইউতে কোনো রোগী এলে বেশির ভাগকেই আমরা ৮/১০ দিনের মধ্যে রিকভারি করে কেবিনে পাঠাতে পেরেছি। কিন্তু এবার সেটি হচ্ছে না। এবার দীর্ঘ সময় লাগছে এবং আইসিইউ থেকে অনেকে আবার ফিরতেও পারছেন না। মূলত অনেকেরই ফুসফুস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে এবং রক্ত জমাট বাঁধছে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। তখন চিকিৎসরা এর উপসর্গ হিসেবে জ্বর, শুষ্ক কাশি, শরীর ব্যথার মতো উপসর্গের কথা জানিয়েছেন।

গবেষকরা এখন বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোভাইরাসের দু’টো নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে এবং এদের মধ্যে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শুরুতে শনাক্ত হলেও এখন সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতিটির। রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত চিকিৎসকরা বলছেন যে, নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে নানান নতুন বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছেন তারা।

ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগে আইসোলেশনে থাকার সময় চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে উঠতো বেশির ভাগ রোগী। কিন্তু এখন ফুসফুস খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অক্সিজেন লেভেলও আগের তুলনায় দ্রুত কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আগে যাদের অক্সিজেন দরকার হতো, তাদের হয়তো দুই লিটার দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৫/১০/১৫/২০ লিটার বা প্রয়োজনে হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন দেয়া হতো। অবস্থার অবনতি হলে কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা দেয়ার পরে আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হতো। কিন্তু এখন এতো সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভাইরাসটি থেকে সংক্রমিত হওয়ার ধরনেও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন তারা। রেকর্ড নিতে গিয়ে দেখি, আগে হয়তো একজন-থেকে একজন সংক্রমণই বেশি হতো। কিন্তু এবারে আক্রান্তরা তাদের কাছে থাকা ৩/৪ জনকে একসঙ্গে সংক্রমিত করছেন।

বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন এই ধরনটি যেহেতু দ্রুত ছড়ায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের সংখ্যাও বাড়বে, মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

যদি আগে একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তার শরীরে যে প্রাকৃতিক ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় সেটা সাউথ আফ্রিকান ধরনের ক্ষেত্রে কাজ করে না বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। এককথায় দক্ষিণ আফ্রিকার এই ধরনটিকে মারাত্মক আখ্যা দিয়ে একে বাংলাদেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’- বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন যে টিকাটি আছে সেটারই সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করার দিকে তারা মনোযোগ দিচ্ছেন। টিকা নিলেও করোনাভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটির প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধের ওপরেই বেশি জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, টানা তিন সপ্তাহ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর লকডাউন ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উপায় নেই। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অর্থাৎ মাস্ক পরা, তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ভয়াবহ এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর পথ।

এছাড়া বাংলাদেশে শনাক্ত ভাইরাসের জেনম সিকোয়েন্স বা জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি কতোটা ছড়িয়েছে সেটা পুনরায় নিশ্চিত হয়ে টিকা দেয়ার কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নতুন ধরনের করোনা উপসর্গে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা রেকর্ড করছে। গতকাল ৮ এপ্রিল সরকারী হিসেবে সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে দেশে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এর আগে গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৫২১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৪ জন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯১ জন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ডিএ//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

করোনর নতুন ধরণ : মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

Update Time : ০৯:৩০:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ এপ্রিল ২০২১

সারাদেশ ডেস্ক :
দেশজুড়ে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। তা বেশ সংক্রামক এবং এর তীব্রতাও ভয়াবহ উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এতে মানুষ দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর লক্ষণ বা উপসর্গ আগের ধরনের চেয়ে কিছুটা আলাদা। এর কারণে মানসিক সমস্যা হচ্ছে রোগীদের। নতুন এ ধরনে নয়া চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার নতুন এই ধরনে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেশি।

আগের ধরনটিতে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল খুবই কম। এবারের ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে। ফলে অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোয় দেশে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
নতুন ধরনটিকে দেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’ বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগন।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি ইউকে’র ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বিপদজনক। এটি খুব দ্রুত ছড়ায়। এর বৈশিষ্ট্য হলো-সংক্রমণ অনেক বেশি। এটির বিরুদ্ধে আমাদের আগের ভ্যারিয়েন্টের অ্যান্টিবডি কাজ নাও করতে পারে। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পরামর্শক কমিটি আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা বৃদ্ধির কথা বলেছিল। কিন্তু করা হয়নি। আইসিইউ চালানোর মতো দক্ষ জনবলও নেই। বর্তমান সংক্রমণের গতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দেখে দেশে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এই বিশেষজ্ঞ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, প্রথম দফার তুলনায় এবারে রোগীদের একটি অংশের মধ্যে অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ার একটি প্রবণতা চিকিৎসকরা দেখতে পাচ্ছেন। অনেককে আক্রান্ত হওয়ার ৬/৭ দিনের মধ্যেই উচ্চমাত্রার অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তাও আবার সেটি তুলনামূলক দীর্ঘ সময়। যেমন ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্যাটার্ন আগের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। এবারে আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের উপসর্গ আরও প্রকট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অনেকের প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছে বলে জানান। এবার নিউরোসাইক্রিয়াটিক সমস্যা, যেমন কারও কারও মধ্যে পাগলামি আচরণের প্রবণতা কিংবা ব্রেইন ইনফেকশনের মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের হাসপাতালে এমন অনেক রোগী তারা পেয়েছেন, যাদের রক্তের অনুচক্রিকার সঙ্গে হিমোগ্লোবিনও কমে যাচ্ছে-যদিও তাদের আগে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার রোগ বা রেকর্ড নেই। অথচ গত বছর প্রথম দফার সংক্রমণের সময় অনেকের রক্তের অনুচক্রিকা কমলেও তখন হিমোগ্লোবিনের সমস্যা রোগীদের মধ্যে পাইনি।

আর এসব নতুন ধরনের সমস্যার কারণে অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়ে অনেককে খুব তাড়াতাড়ি আইসিইউতে নিতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চলতি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা একটু খারাপ হলে তা দ্রুতই খারাপতর হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগে আইসিইউতে কোনো রোগী এলে বেশির ভাগকেই আমরা ৮/১০ দিনের মধ্যে রিকভারি করে কেবিনে পাঠাতে পেরেছি। কিন্তু এবার সেটি হচ্ছে না। এবার দীর্ঘ সময় লাগছে এবং আইসিইউ থেকে অনেকে আবার ফিরতেও পারছেন না। মূলত অনেকেরই ফুসফুস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে এবং রক্ত জমাট বাঁধছে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। তখন চিকিৎসরা এর উপসর্গ হিসেবে জ্বর, শুষ্ক কাশি, শরীর ব্যথার মতো উপসর্গের কথা জানিয়েছেন।

গবেষকরা এখন বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোভাইরাসের দু’টো নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে এবং এদের মধ্যে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শুরুতে শনাক্ত হলেও এখন সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতিটির। রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত চিকিৎসকরা বলছেন যে, নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে নানান নতুন বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছেন তারা।

ডা. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগে আইসোলেশনে থাকার সময় চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে উঠতো বেশির ভাগ রোগী। কিন্তু এখন ফুসফুস খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অক্সিজেন লেভেলও আগের তুলনায় দ্রুত কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আগে যাদের অক্সিজেন দরকার হতো, তাদের হয়তো দুই লিটার দিয়ে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৫/১০/১৫/২০ লিটার বা প্রয়োজনে হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন দেয়া হতো। অবস্থার অবনতি হলে কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা দেয়ার পরে আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হতো। কিন্তু এখন এতো সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভাইরাসটি থেকে সংক্রমিত হওয়ার ধরনেও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন তারা। রেকর্ড নিতে গিয়ে দেখি, আগে হয়তো একজন-থেকে একজন সংক্রমণই বেশি হতো। কিন্তু এবারে আক্রান্তরা তাদের কাছে থাকা ৩/৪ জনকে একসঙ্গে সংক্রমিত করছেন।

বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন এই ধরনটি যেহেতু দ্রুত ছড়ায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের সংখ্যাও বাড়বে, মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

যদি আগে একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তার শরীরে যে প্রাকৃতিক ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় সেটা সাউথ আফ্রিকান ধরনের ক্ষেত্রে কাজ করে না বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। এককথায় দক্ষিণ আফ্রিকার এই ধরনটিকে মারাত্মক আখ্যা দিয়ে একে বাংলাদেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’- বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন যে টিকাটি আছে সেটারই সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করার দিকে তারা মনোযোগ দিচ্ছেন। টিকা নিলেও করোনাভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটির প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধের ওপরেই বেশি জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, টানা তিন সপ্তাহ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর লকডাউন ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আর কোনো উপায় নেই। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অর্থাৎ মাস্ক পরা, তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ভয়াবহ এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর পথ।

এছাড়া বাংলাদেশে শনাক্ত ভাইরাসের জেনম সিকোয়েন্স বা জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টটি কতোটা ছড়িয়েছে সেটা পুনরায় নিশ্চিত হয়ে টিকা দেয়ার কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নতুন ধরনের করোনা উপসর্গে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা রেকর্ড করছে। গতকাল ৮ এপ্রিল সরকারী হিসেবে সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে দেশে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এর আগে গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৫২১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৪ জন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯১ জন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ডিএ//