বিশেষ প্রতিনিধিবিএনপি মহাসচিব মনে করেন, রাজনীতিতে ব্যর্থতা-সফলতা থাকতে পারে। সেখানে মওদুদ আহমেদ রাজনীতিতে সফল ছিলেন। ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ গণতন্ত্রের জন্যই কাজ করেছেন তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে। সেখান থেকে তিনি বিচ্যূত হননি’ বলেন ফখরুল।
‘সেজন্য তাকে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জেল খাটতে হয়েছে এবং নির্যাতিত হয়েছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও তিনি নিগৃহীত হয়েছেন’ – মন্তব্য করেন আলমগীর।
জেনারেল এরশাদের সরকারে মওদুদ আহমেদের সহকর্মী ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। পরে হোসেনও বিএনপিতে যোগ দেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এক সময় সরকারে একসাথে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছি। কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসাবে সম্পর্কটা ঠিক ছিল।’
জেনারেল এরশাদের শাসনের সময় ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালের সংসদের তিনি জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালের সংসদে তিনি সংসদ নেতাও ছিলেন। ১৯৯১ সালে সব দলের অংশগ্রহণে যে নির্বাচন হয়-তাতে তিনি জাতীয় পার্টি থেকেই এমপি হয়েছিলেন।
বিএনপির প্রার্থী হিসাবে এমপি হয়েছিলেন তিনি ২০০১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে। সংসদে সাংবিধানিক কোন ইস্যুতে আলোচনায় বিএনপি ব্যারিস্টার আহমেদের ওপর বেশি নির্ভর করতো বলে দলটির নেতারা বলেছেন।
রাজনীতিক লেখক
মওদুদ আহমেদ ডজন খানেক বই লিখেছেন। ‘ডেমোক্রেসী অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট’, ‘এ স্টাডি অব পলিটিক্স অ্যান্ড মিলিটারী ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ,’ এবং ‘এরা অফ শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ কনস্টিটিউশনাল কোয়েস্ট ফর অটোনমি’-এসব শিরোনামে লেখা তার তিনটি বই ব্যাপক আলোচিত। এছাড়া ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র ১৯৯১ থেকে ২০০৬, ‘কারাগারে যেমন ছিলাম ২০০৭-২০০৮’ – এই দু’টি শিরোনামের দু’টি বইও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, তার লেখা বইগুলোতে ইতিহাস ও সমসাময়িক রাজনীতি উঠে এসেছে। তবে গণতান্ত্রিক আদর্শ ছিল তার লেখার মূল ভিত্তি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের রাজনীতিতে থাকলেও মওদুদ আহমেদ তার লেখা বইগুলোতে নিরপেক্ষভাবে ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরেছেন এবং এই বইগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে। রাজনীতি, আইন পেশা, লেখালেখি এবং বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো-এই ক্ষেত্রগুলোতে অবাধ বিচরণ ছিল ব্যারিস্টার আহমেদের। তবে রাজনীতিবিদের পরিচয়কেই তিনি বেশি উপভোগ করতেন।
মওদুদ আহমদ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এর ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যারয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং বিদেশি আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ছিলেন তিনি।
জন্ম
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালের ২৪শে মে। তার পিতা মরহুম মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং মাতা বেগম আম্বিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে ব্যারিস্টার আহমেদ ছিলেন চতুর্থ।
সংসার জীবন
তাঁর স্ত্রী হাসনা জসীমউদদীন মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং তিনিও এরশাদ সরকারের সময়ে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হয়েছিলেন। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। বড় ছেলে আসিফ মওদুদ অল্প বয়সেই মারা যান। আর দ্বিতীয় সন্তান আমান মওদুদ প্রতিবন্ধী ছিলেন এবং তিনিও মারা যান ২০১৫ সালে। তার পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, ছেলেদের মৃত্যুর সেই কষ্টের কথা তিনি সবসময় আত্নীয়স্বজনের কাছে প্রকাশ করতেন। তার মেয়ে আনা আসপিয়া মওদুদ স্বামীসহ থাকেন নরওয়েতে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের শ্বশুর পল্লীকবি জসীমউদদীন।
ডিএ//
Leave a Reply