অবসরে গেলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার
- Update Time : ০৬:১২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / ১ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই দশক ধরে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে গেলেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসরে যাচ্ছেন তিনি। সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এ অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে কোনো বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। ’
তার অবসরের মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়জনে।
তার জন্ম ১৯৫৪ সালের ১ মার্চ। মির্জা হোসেইন হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে জেলা আদালত, ১৯৮১ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ২০০১ সালের ৩ জুলাই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০০৩ সালের ৩ জুলাই স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন মির্জা হোসেইন হায়দার। সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ভুটান, চীন, ফ্রান্স, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উজবেকিস্তান সফর করেছেন।
বিচারিক দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়া এই বিচারপতিকে আজ তার শেষ কর্মদিবসে বিদায় সম্ভাষণ জানানো হয়। এটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। ভার্চুয়াল এই আয়োজন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা যুক্ত ছিলেন।
বিদায় বেলায় নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করতে শ্বেতশুভ্র ভবনটিতে প্রবেশ করি। সেই থেকে এই ভবনটিকে আমি আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করে নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা, এমনকিই রাত পর্যন্ত এখানে কাজের মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে। একপর্যায়ে ২২ বছরের ওকালতি জীবনের ইতি টেনে ২০০১ সালে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করি। সেদিন থেকেই আমার জীনের মোড়টা ঘুরে যায়। সেদিন থেকেই মনে হয়, সত্য যে কঠিন, সে কঠিনেরে ভালবাসিলাম।
দেশের বিচার ব্যাবস্থা সম্পর্কে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সবার যৌথ প্রয়াসেই বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থা আরো পরিনত ও উন্নত হবে। সমষ্টিগত প্রয়াস ও প্রচেষ্টাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যাবস্থার সাথে সম্পৃক্ত সকলেরই নিবিড় ভাবে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। সুবিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদাধিকারীর ঐকবদ্ধ থাকা একান্ত প্রয়োজন।’
বিচারবিভাগ স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি (নির্বাহী, আইন ও বিচার) বিভাগের চৌহদ্দি সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যেখানে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থাকার নির্দেশনাও আছে। নিজ নিজ পরিধির মধ্যে থেকে কে কতটুকু কাজ করবে তা সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে যাতে কেউ রেখা অতিক্রম করতে না পারে।
তিনি বলেন, বিচার ব্যাবস্থা তার নিজস্ব গতিতেই চলে। শত চেস্টা চালিয়েও কেউ তার গতি রোধ করতে পারে না, পারবে না। যত বাধা বিপত্তি কিংবা ঘাত-প্রতিঘাতই আসুক না কেন আমাদের ঐকান্তিক ও ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিচারবিভাগের গতি কেউ রোধ করতে পারবে না।
আইনের তত্ব, তথ্য ও উপাত্ত পরিস্কার ভাবে না যেনে আদালতের রায়কে কেউ যেন বিতর্কিত না করেন সে আহবান জানিয়ে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, ‘অনেক সময় বিচারবিভাগ প্রদত্ত আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে বিচারক ও বিচারব্যবস্থাকে এক করে ফেলা হয়। আমারা ভুলে যাই যে বিচারকও একজন মানুষ।’
বিদায় বেলায় সবার প্রতি অনুরোধ রেখে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, ‘সুবিচারের প্রতিক শ্বেতশুভ্র অট্টালিকাটির গায়ে যেন কোন কালিমা লাগে, এমন কিছু যেন আমরা না করি।’
ডিএ/এসএস//