দিদারুল আলম : বাংলার রূপময় নিসর্গ ছুঁয়েছে বসন্ত। চারিদিকে ফুলের শোভা। অশান্ত বাতাস। এমনও দিনে মন যেন পাগলপারা।
শীতের জীর্ণতা সরিয়ে এসেছে ঋতুরাজ। রোববার পহেলা ফাল্গুন, জীবনকে রাঙিয়ে দেয়ার দিন।
মহামারি করোনাও এতটুকু ম্লান করতে পারেনি বাংলার জনপদের মানুষদের-তারা ঠিকই হৃদয় দিয়ে বরণ করছেন ঋতুর রাজাকে। রাজধানী ঢাকায় তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মাঝে বসন্ত বরণে নানা আয়োজন পরিলক্ষিত হচ্ছে। থাকছে রং বেরং এর পোশাক সংগ্রহ, ফুলের ব্যবহার ও সাংস্কৃতিক আয়োজন-গল্প আড্ডাবাজি, ঘুরাঘুরি ।
কবিতার মতো তাই আওড়ে যায় সে- ‘ফুলের এমন শোভা দেখিনি;/ এমন বিচিত্র ফুলের রঙে উজ্জ্বল বিকেল দেখিনি।’
কবি শামসুর রাহমান বসন্তের মায়ায় লিখেছেন, ‘গাছের শাখায় ফুল হাওয়ার সংস বে/যখন নীরবে দিব্যি সানন্দে দুলতে/ থাকে, পথচারী/ অথবা জানালা-ধরে-থাকা যুবতীর চোখ পড়ে/ কে জানে কী ছবি সব দোলে কিছুক্ষণ!/ বসন্তের মায়া রয়ে যায় বাস্তবিক নানাভাবে।’
সত্যিই বসন্ত ধরা দেয় নানাভাবে। আজ বসন্তের আগমনে কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হবে শুধু শ্যামল সবুজ প্রান্তর নয়, এই শহরও। আর শুকনো পাতারা ঝরে গিয়ে জন্ম নেবে কচি নতুন পাতার। সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর ওই পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত আজ দেবে নবযৌবনের ডাক।
দেশের গ্রাম অঞ্চলে আজ প্রকৃতিতে রয়েছে এক ভিন্ন আবহ। যা চিরন্তন।
প্রাণে প্রাণে মিলবে প্রাণ। ফুলের সৌরভে মেতে উঠবে চারিপাশ। বসন্তের রং ‘বাসন্তী’কে সঙ্গে নিয়েই শুরু হলো দিনের শুরু। গাঁদা ফুলের রঙেই আজ সাজছে তরুণীরা। পরছে বাসন্তী রঙের শাড়ি। খোঁপায় গুঁজছে ফুল, মাথায় টায়রা আর হাতে পরবে কাচের চুড়ি।
তরুণরাও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে নামবে বাংলার পথে-ঘাটে। বসন্ত মানেই কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা। তাই তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সব বয়সী মানুষ ঘরের বাইরে আসবেন। আর রাজধানীর বুকে বাসন্তী সাজে তারা ঘুরে বেড়াবেন শাহবাগ, চারুকলা আর টিএসসিতে।
এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলা মার্চে। তবুও তরণ তরণীর আগমনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিণত হচ্ছে বাসন্তী রঙের বাগানে। রমনা পার্ক, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে ঘুরতে বেরুবে রাজধানীবাসী।
ঘরকুণো মানুষটিও হয়তো ঘর ছেড়ে বের হবেন। পলাশ-শিমুলের রঙে রাঙিয়ে নেবেন মন। হয়তো বসন্তের বিকেলটা বা সন্ধ্যাটা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটিয়ে হবেন পরমসুখী।
এই বসন্ত কেবল আনন্দ-উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়।
১৯৫২ সালের আট ফালগুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
তাই বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গ–ন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। এ উৎসব এখন সব বাঙালির উৎসব।
এ উৎসবটির একটি ইতিহাস আছে। মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম ও উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য।
বিভিন্ন গনমাধ্যম বসন্ত উপলক্ষে রাখেছে নানা আয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছার ঢালি ছড়িয়ে পরেছে। এরূপ প্রাণবন্ত হউক মানুষের জীবন যাত্রা এটিই প্রত্যাশা।
ডিএ //
Leave a Reply