লাইফ স্টাইল ডেস্ক : মানুষ মানুষের বাহ্যিকতার দিকেই বেশী খেয়াল রাখে। অল্প বয়সে যদি চেহারায় বৃদ্ধের ছাপ চলে আসে। এটি নিশ্চয়ই কেউ চায় না। সকলে চায় তার চেহারায় লাবণ্য অটুট থাকুক। গায়ের চামড়া যেন তাড়াতাড়ি ঢিলা না হয় ইত্যাদি।
রূপ চর্চায় মধু
১. দাদ: দাদযুক্ত স্থানে ভালভাবে ঘষে রক্ত বের করতে হবে। তারপর রক্ত পরিষ্কার করে মধুর প্রলেপ দিতে হবে। তারপর তার উপর একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিতে হবে। এভাবে প্রতিদিন করুন। দেখবেন এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার রোগ সেরে গেছে।
২. ত্বকের দানা বা খসখসে ভাব: দুই চামচ মধুর সাথে এক চামচ বাদামের তেল মিশিয়ে নিন। তারপর এই তেল চেহারায় ৫ মিনিট পর্যন্ত মালিশ করুন। বিশ মিনিট পর একটু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বকের দানা দানা ভাব চলে গেছে এবং ত্বকের খসখসে অবস্থাও নেই।
৩. চামড়ায় ভাজ পড়া: চার চামচ আটা বা ময়দা নিন। দুই চামচ দুধ এবং দুই চামচ মধু নিয়ে সবগুলো একসাথে মিশান। এবার এই খামির চামড়ায় মালিশ করুন। আধা ঘন্টা রাখুন এরপর ধুয়ে ফেলুন। আপনার চামড়ায় আর ভাজ থাকবে না। আপনার চামড়া হবে কোমল মসৃণ। আর তাই নয় আপনার চামড়াকে সূর্য রশ্মির ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করবে।
৪. ক্ষত সারাতে: ক্ষত বা আঘাতের ক্ষরণ বন্ধ ও তা জীবাণু মুক্ত রাখতে মধু অত্যন্ত কার্যকর। ক্ষত শুকাতে মধুর প্রলেপ উপকারী। হাড় ভাঙ্গা বা মচকানোতে মধুর প্রলেপ উপকারী।
৫. চেহারার রং ফর্সা করা: দেড় চামচ মধু, এক চামচ গাজরের রস এবং সামান্য পরিমাণ সুজি নিন। সবগুলো একসাথে মিশিয়ে নিন। রাতে চেহারায় মালিশ করুন। ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘন্টা পর বড় এক জগ পানিতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে এই পানি নিয়ে চেহারা ধৌত করুন। আপনার চেহারা হবে সুন্দর ও ফর্সা। তাছাড়া মুখমন্ডল পরিষ্কার করে সামান্য মধু আঙ্গুলে লাগিয়ে চক্রাকারে সারা মুখ ও ঘাড়ে মালিশ করুন। কিছুক্ষণ পরেই মুখ ও ঘাড়ের রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে যাবে। এভাবে ২০-২৫ দিন মধু ব্যবহার করুন। আপনার মুখমন্ডল সুন্দর, ফর্সা ও লাবণ্যময় হয়ে উঠবে।
খাঁটি মধু চেহারায় মালিশ করুন। ১৫ মিনিট শুয়ে থাকুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চেহারা ধুয়ে ফেলুন। ভালভাবে চেহারা শুকিয়ে গেলে চেহারায় সামান্য যাইতুন তেল দিন। এভাবে এক সপ্তাহ করে দেখুন আপনার চেহারার রং কত লাবণ্যময়।
গন্ধগোকুলের সাথে মধু মিশিয়ে রাতে মুখমন্ডলে মালিশ করুন। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৬. চুলের খুশকি: লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করতে হবে। তারপর ২০-৩০ মিনিট পর ভাল কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ৫-৭ দিন ব্যবহার করলে চুলের খুশকি দূর হয়ে যাবে।
৭. এলার্জি : এক চামচ মধুর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যায় এলার্জি আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে এবং প্রতিদিন এক চামচ মধু খেতে হবে। ইনশাল্লাহ এলার্জি ভাল হয়ে যাবে।
৮. চুল পড়ায়: গোসলের আগে এক চামচ মধু এক চামচ গরম অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে মাথায় দিন। ১৫ মিনিট পর গোসল করুন। চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। খাবার হজমে ত্রুটি হলে চুল পড়ে বা ত্বকে সমস্যা হয়। প্রতিদিন খাবারের পর মধুর সাথে পানি মিশিয়ে খেলে পেট হজমের সমস্যা দূর হয়ে এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। ত্বকে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ত্বক সুন্দর হয়।
৯. শীতকালে ঠোঁট, হাত, পা ফাটা: শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় অনেকের ঠোঁট, হাত, পা ফাটে। ফাটা স্থান পরিষ্কার করে মধু মালিশ করে। ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার করে নিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনে দু একবার, সপ্তাহে ২-৩ দিন এভাবে ব্যবহার করলে উক্ত সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
১০. মুখে বয়সের ভাজ: আগে মুখ মন্ডল পরিষ্কার করে নিন। সামান্য মধু ও দুধ একত্রে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে আলতু ভাবে মুখমন্ডলে লাগান। এভাবে ১৫.২০ দিন ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ভাজ অনেকটাই কমে যাবে।
১১. ব্রণ, একজিমা: ব্রণ সমস্যায় চন্দন বাটার সাথে ,মধু মিশিয়ে ব্রণে কিছু দিন লাগালে ব্রণ সহ ব্রণের কালো দাগ দূর হয়ে যায় । তাছাড়া ব্রণের ক্ষেত্রে তিন টেবিল চামচ মধুতে এক চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। রাতে ঘুমোবার আগে ব্রণে লাগিয়ে সকালে গরম পানি দিয়ে ধৌত করলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্রণ মূলসহ দূরীভূত হয়। একজিমাতে এভাবে ব্যবহার করলে ভাল হয়ে যায়।
১২. রোদে পোড়া দাগ: রোদে পোড়ে, চেহারা, ঘাড়, চামড়া কালো হয়ে গেছে। এই অবস্থায় মধু সাথে কমলা লেবুর খোসা বাটা মিশিয়ে স্থানগুলো পরিষ্কার করে মাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
১৩. শুষ্ক ত্বক: শুষ্ক ত্বকের যত্নে অ্যামন্ড বাটা ও গোলাপের পাঁপড়ি বাটার সাথে মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণ মুখ ও ঘাড়ে মালিশ করতে হবে। তারপর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ১৫-২০ দিন ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা ভাল হয়ে যাবে।
১৪. পোকার কামড়: মৌমাছির হুলে বিষ থাকে। আল্লাহ তায়ালা এই মধুর মধ্যেও হুল ফুটানো বিষ এবং অন্যান্য পোকা কামড়ের বিষের চিকিৎসা রেখে দিয়েছেন। পোকা কামড়ের বিষ তাড়াতে এক ভাগ মধু ২ ভাগ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ছোট চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খুব আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করুন। দু এক মিনিটের মধ্যে ব্যথা চলে যাবে।
১৫. কুষ্ঠ বা ধবল রোগে: নিশাদলের সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন মালিশ করুন। ইনশাআল্লাহ কুষ্ঠ রোগ সেরে যাবে।
১৬. ত্বকের প্রসাধনী দূর করতে: নারকেল তেলের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে নিন। চোখের আশেপাশের অংশ বাদে বাকি ত্বকে লাগান। ৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বকে লাগানো প্রসাধনী দূর হবে। প্রসাধনী লাগানোর কারণে যে লোমকূপগুলো বন্ধ ছিল তাও খুলে যাব।
১৭. মুখ পরিস্কারের জন্য : আমরা কত রকম ফেসওয়াশ ব্যবহার করি। কিন্তু মধু সকল ফেসওয়াশের থেকে অনেক বেশি উপকারী। রাণী ক্লিউপেট্রা সৌন্দর্যের জন্য মধু ব্যবহার করতেন। অনেক বিউটি এক্সপার্টরাই মধুর উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছেন। তাদের মতে, ত্বকের জন্য মধুর থেকে উপকারী জিনিস আর একটিও নেই। মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যা ত্বককে শুধু উজ্জ্বলই করে না, তারই সঙ্গে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও দূর করে। প্রতি দিন সকালে পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ভিজিয়ে নিন।
এরপর প্রয়োজন মতো মধু নিয়ে ভেজা মুখে ভালো করে লাগান। হালকা হাতে মালিশ করুন। তারপর ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন নিয়মিত মধু আপনার চেহারার দীপ্তি প্রকাশ পাবে।
১৮. ত্বকের সজীবতায়: মধু প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার । যাইতুনের তেলের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে মালিশ করুন। অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট। ভেজা সুতি কাপড় দিয়ে ত্বক মুছে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের মৃত কোষগুলো সজীবতা ফিরে পাবে।
১৯. আগুনে পোড়া: শরীরে কোথাও পুড়ে গেলে সামান্য মধু মেহেদী পাতার সঙ্গে বেটে লাগালে এতে পোড়াজনিত জ্বালা ও কষ্ট লাঘব হয়।
২০. চর্মরোগ: প্রতিদিন সকালে ২০ গ্রাম মধু ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে ৪-৫ মাস খেলে চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি চর্মরোগ সেরে যায়।
Leave a Reply