1. newsroom@saradesh.net : News Room : News Room
  2. saradesh.net@gmail.com : saradesh :
যেসব কীট-পতঙ্গ কামড়ালে মানুষের মৃত্যুও ঘটে - সারাদেশ.নেট
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার হাইকোর্টে ২৩ অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ খালাস পেলেন যুবদল নেতা আইনজীবী নুরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হলেন এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

যেসব কীট-পতঙ্গ কামড়ালে মানুষের মৃত্যুও ঘটে

  • Update Time : রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২১

সারাদেশ ডেস্ক : চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে একটি নাটকের শুটিং চলাকালে মৌমাছির কামড়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর একজন অভিনেতাকে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। হাসপাতাল সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ওই অভিনেতার শরীরে ৪০০’র বেশি মৌমাছি হুল ফুটিয়েছিল। ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জের একটি গ্রামে একটি আউটডোর শুটিং চলার সময় ঘটনাটি ঘটে।

তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষের চারপাশে থাকা অনেক ক্ষেত্রে অতি পরিচিত পতঙ্গের হঠাৎ আক্রমণে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে।

প্রাণিবিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, এসব পতঙ্গের বেশিরভাগই মানুষকে আক্রমণ করতে গিয়ে হুল ফুটায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এমন অনেক পতঙ্গ আছে যেগুলো আমাদের খুবই পরিচিত এবং এদের অনেকগুলোই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিষ ছড়ায়।

আবার এর মধ্যে এমন কীট-পতঙ্গও রয়েছে, যাদের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে এবং সবগুলো বিষ ধারণ করে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পিঁপড়ার কথা। সব পিঁপড়া বিষাক্ত নয়, কিন্তু বিষ পিঁপড়া হিসেবে যেটি বহুল পরিচিত, সেটিতে বিষ আছে। আবার সব মৌমাছির হুলে যেমন বিষ থাকে না, তেমনই সব ব্যাঙও বিষাক্ত নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুর্শিদা বেগম জানান, কীট-পতঙ্গের উপস্থিতি একটি অঞ্চলের পরিবেশের জন্য কোন না কোনভাবে কাজে লাগে এবং এগুলোকে বিশেষভাবে ক্ষতিকারক প্রাণী হিসেবে ঢালাওভাবে চিহ্নিত করা না গেলেও এটা সত্যি যে কিছু কিছু পতঙ্গের বিষ আছে।

“মনে রাখতে হবে, আক্রান্ত না হলে কিংবা আক্রান্ত হওয়ার ভয় না পেলে কোন পতঙ্গ মানুষকে আক্রমণ করে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

চলুন পরিচিত হওয়া যাক বিষ আছে এমন কিছু পতঙ্গের সঙ্গে।

মৌমাছি :

প্রাণিবিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদেরা মনে করেন যে মৌমাছি, প্রজাপতি আর ফড়িং – এই তিনটি পতঙ্গ কোন একটি এলাকার পরিবেশ স্বাস্থ্যকর কি-না, তার নির্দেশক। অর্থাৎ কোন এলাকায় যদি এই তিনটি প্রাণী বেশি থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে সেখানকার পরিবেশ স্বাস্থ্যকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন অঞ্চলে যদি এদের সংখ্যা খুবই কম থাকে, তাহলে সহজেই ধরে নেয়া যেতে পারে যে সেখানকার পরিবেশে দূষণের মাত্রা বেশি। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটোমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবেরা ইয়াসমিন বলছেন, বাংলাদেশে একটি পূর্ণ বয়স্ক মৌমাছির হুলে কতটা পরিমাণ বিষ থাকে, সে সম্পর্কে কোন গবেষণালব্ধ তথ্য নেই। তিনি বলেন, মৌমাছি মূলত একটি সামাজিক পতঙ্গ। যদিও সব মৌমাছির প্রজাতি একই রকমভাবে সামাজিক নয়, তবে সাধারণত যেসব মৌমাছি দেখা যায়, তারা এক সঙ্গে দল বেধে কাজ করে। ফলে মৌমাছি স্বাভাবিকভাবে হামলা চালালেও সেটি শেষ পর্যন্ত একটি দলগত হামলা হয়ে দাঁড়ায়, জানালেন সাবেরা ইয়াসমিন।

“কিন্তু একটি বা দুইটি মৌমাছির হুলে মানুষের বড় বিপর্যয় হয় না,” বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে বলছিলেন তিনি।

“তবে কারও শরীরে যদি, ধরা যাক বাংলাদেশের সরিষা-ক্ষেতে হওয়া মৌমাছির যে আকার, তার ৫০০ মৌমাছি হুল ফোটায়, তাহলে রক্তে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু ঘটতে পারে।”

আবার ৪০-৫০টি মৌমাছির হুলে যে পরিমান বিষ থাকে, তা একটি শিশুর মৃত্যু ঘটাতে পারে। তবে মৌমাছির বিষক্রিয়া মানুষের ওপর কতটা হবে, তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর। অর্থাৎ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, তার অ্যালার্জি আছে কি-না, মৌমাছি কতক্ষণ ধরে হুল ফুটিয়েছে – এসবের ওপর। তবে সাবেরা ইয়াসমিন এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, মৌচাকে ঢিল না পড়লে সাধারণত মৌমাছি আক্রমণ করে না।

ভ্রমর:

ভ্রমরও মৌমাছি গোত্রের আরেকটি পতঙ্গ। কিন্তু এটি দেখতে কিছুটা বেটে, তবে সব মিলিয়ে মৌমাছির চেয়ে আকারে বড়।

মৌমাছির মত ভ্রমরেরও শরীর তিনটি ভাগের সমন্বয়ে, আর এদের দুই জোড়া ডানা রয়েছে।

ভ্রমর কাঠ বা গাছের মধ্যে বাসা বানিয়ে বাস করে।

বাংলা সাহিত্যে যে ভ্রমরের উপমা বহুল প্রচলিত, সেই দেশী কালো ভ্রমরের ডানা ময়ূরকণ্ঠী নীল।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, পুরুষ ভ্রমর হুল ফোটায় না – হুল ফোটায় মেয়ে-ভ্রমর।

মৌমাছির চেয়ে এদের আচরণে খুব পার্থক্য থাকে না, হুল ফোটানোর ক্ষেত্রেও নয়।

বোলতা:

বোলতা মূলত ওয়াসপ জাতের একটি পতঙ্গ। বোলতা হলো পিঁপড়া এবং মৌমাছির কাছাকাছি গোত্রের পোকা।

স্থানীয়ভাবে কোন কোন এলাকায় একে বল্লাও বলা হয়।

এর রঙ হলুদ, আকারে একটু ছোট হয়।

একটি পূর্ণ বয়স্ক বোলতার দৈর্ঘ্য সবোর্চ্চ ১৫ মিলিমিটার।

বোলতা অন্য পোকামাকড়ের শূককীটের মধ্যে ডিম পাড়ে এবং উদ্ভিদের পরাগায়নে সহায়তা করে।

বোলতা কেবলমাত্র আঘাত পেলেই কামড়ায়।

ভীমরুল:

ভীমরুল দেখতে অনেকটাই বোলতার মত, তবে আকারে বড় জাতের একটি পতঙ্গ।

ভীমরুল ও বোলতার মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাণিবিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, বোলতার রঙ হলুদ ও এটি আকারে ছোট। অন্যদিকে, ভীমরুল বড় এবং এর রঙ কালো, আর পিঠে হুলুদ ডোরাকাটা দাগ থাকে।

ভীমরুল গাছে বাসা বাধে। কিছু প্রজাতির ভীমরুল দৈর্ঘ্যে ৫৫ মিলিমিটার, অর্থাৎ প্রায় আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।

কিন্তু বাংলাদেশে যেসব ভীমরুল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার দৈর্ঘ্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

বিষ পিঁপড়া:

পিঁপড়ার অনেকগুলো জাত বাংলাদেশে দেখা যায়।

কিন্তু বিষ পিঁপড়া একমাত্র পিঁপড়া, যাদের কয়েকশো’ একসাথে মিলে কোন মানুষকে কামড়ালে বিষক্রিয়ায় সে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

বিষ পিঁপড়া আকৃতিতে প্রায় এক ইঞ্চির মত হয়ে থাকে।

সাধারণত, এদের বসত আক্রান্ত হলে কিংবা খাবারের প্রচণ্ড অভাব হলেই মূলত এগুলো আক্রমণ চালানোর মত ঘটনা ঘটায়।

বিষ পিঁপড়ার বিষে ফরমিক অ্যাসিড থাকে। এগেুলো মানুষকে কামড়ালে সাথে সাথে জ্বালাপোড়া করবে, ব্যথা করবে এবং ফুলে যাবে।

বিছে:

বিছে স্থলচর পতঙ্গ। ইংরেজি নাম সেন্টিপিড, যাকে আবার হেয়ারি ক্যাটারপিলার বলা হয়।

বিছে পোকা মূলত মথের জীবন চক্রের একটি অংশ, প্রাপ্তবয়স্ক হলে এটি মথ হয়।

মথ মূলত প্রজাপতির মত দেখতে এক পতঙ্গ, যা মূলত রাতে বের হয় এবং এটি দেখতে অনুজ্জ্বল রঙয়ের হয়।

এ পতঙ্গ গাছে থাকে। বাংলায় একে বলে ‘শতপদ’।

এই পতঙ্গের বহু প্রজাতি রয়েছে, যদিও তাদের সবার পায়ের সংখ্যা ঠিক একশো’ নয়। মজার ব্যাপার হলো, এ পতঙ্গের পা বা দেহভাগ সব সময় বেজোড় সংখ্যায় থাকে।

প্রাণিবিজ্ঞানীরা জানান, পূর্ণ বয়স্ক একটি বিছের ১৫ থেকে ১৯১টি দেহভাগ থাকতে পারে। প্রত্যেক দেহভাগে একজোড়া বিষাক্ত পা থাকে।

সব ধরণের বিছে পোকায় বিষ থাকে।

ব্যাঙ:

চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় কয়েক বছর আগে পাওয়া গিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম বিষাক্ত ব্যাঙ।

এর ইংরেজি নাম গ্রিন ক্যাসকেড ফ্রগ, আর বৈজ্ঞানিক নাম ওডোরানা লিভিডা। এর পিঠের কাছে সবুজ রং থাকে।

এই ব্যাঙের দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে সাত সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর সংস্পর্শে এলে মানুষের চামড়ায় সাধারণত চুলকানি হয় এবং তা ফুলে লাল হয়ে যায়। কিন্তু মৃত্যু হতে পারে এমন বিষক্রিয়ার কথা অবশ্য এখনও শোনা যায়নি।

বিষাক্ত কিছু কামড়ালে কী করবেন?

কোন পতঙ্গ আক্রমণ চালানোর আগে কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে। যেমন মৌমাছির আক্রমণের আগে কিছু সংকেত বোঝা যায়। তেমন ক্ষেত্রে সতর্কতা নিলে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

প্রাণিবিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদদের কয়েকটি পরামর্শ এমন:

* মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল, ভ্রমর — এর কোনটিকে পাল ধরে উড়ে আসতে দেখলে ভয়ে দৌড় দেয়া যাবে না, বরং মুখ-হাত-পাসহ শরীরের যেসব অংশ খোলা থাকে, তা ঢেকে স্থির হয়ে দাঁড়ান বা বসুন

* আক্রান্ত হওয়ার পরপরই নখ দিয়ে হুল তুলে ফেলুন

* আক্রান্ত হওয়ার স্থানে ঘষা যাবে না, কারণ তাতে করে বিষ ছড়িয়ে পড়ে

* সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন আক্রান্ত স্থান, আর বরফ ঘষতেও পারেন

* অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন

* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালামাইন জাতীয় লোশন এবং বাজারে প্রচলিত পোকামাকড়ের কামড় প্রশমণের অয়েন্টমেন্ট লাগাতে পারেন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *