কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এক নির্বাচনী কর্মকর্তাকে নিরাপত্তা বিধানে হাইকোর্ট নির্দেশ
- Update Time : ০৪:০৯:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১
- / ০ Time View
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবেদক : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এক নির্বাচনী কর্মকর্তা মো.শাহজাহান আলীকে নিরাপত্তা বিধানে হাইকোর্ট আজ নির্দেশ দিয়েছেন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের জানান, ভেড়ামারা পৌর নির্বাচনের একটি কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী ও তার পরিবারকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নিরাপত্তা বিধানে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জানান, নির্বাচনী কর্মকর্তা আদালতকে জানান, তাকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। তিনি নিরাপত্তাহীনহায় রয়েছেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলীকে নিরাপত্তা বিধানে আদেশ দেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলা হয়েছে। আদেশটি অবহিতকরণে আজই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান ডেপুটি এটর্নি জেনারেল।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে চলাকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে স্থানীয় এসপির দুর্ব্যবহারের সাক্ষী প্রিজাইডিং অফিসার মো. শাহজাহান আলী, তিনি ভেড়ামারা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা।
এর আগে গতকাল ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাতকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এই আদেশ দেন।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসীন হাসানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ সংক্রান্ত বিষয় ব্যাখ্যা দিতে এসপিকে তলব করা হয়। আগামী ২৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টায় তাকে হাইকোর্টে হাজির এসপি’কে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে হবে। এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা প্রশ্নে রুলও জারি করা হয়েছে। তাকে তিন দিনের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের আদেশের বিষয়টি সারাদেশ’কে জানান বেঞ্চ অফিসার এমদাদ হোসেন। তিনি জানান, এ সংক্রান্ত গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত স্বপ্রনোদিত এই আদেশ দেন।
ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসীন হাসানের সঙ্গে জেলার এসপি’র অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন বরাবর পেশ করা হয়। গত ১৬ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালীন ওই ঘটনায় এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিল করা হয়। এ আবেদনের কপি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়। অভিযোগের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) দপ্তরেও পাঠানো হয়।
আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেছেন, ‘কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের সময় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কয়েকজনকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর পোলিং এজেন্টদের সাথে বসে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান।
প্রিজাইডিং অফিসাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সময় ওই কেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০/৫০ জন ফোর্সসহ আসেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। সেসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কি করেন এখানে? আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনি এখানে কি করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান। পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক, চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তখন দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার ফোর্সরা আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে পাঠায় কে? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কি আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করি।’ আবেদনে
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ লংঘনের অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবী পেশ করেছেন।
ডিএ/এসএস//