সারাদেশ ডেস্ক : মোটা দাগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলকে ‘নজিরবিহীন’ বলায় কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তিনি তাঁর হোয়াইট হাউসে বসবাসের শেষ দিনটিকেও রীতিমতো ‘নজিরবিহীন’ করে গেলেন।
গতকাল বুধবার নিজের প্রেসিডেন্ট মেয়াদের শেষ দিন ট্রাম্প বিদায় নিলেন তাঁর নিজের মতো করে, কোনো ঐতিহ্য মানা বা রীতি-রেওয়াজের ধারেকাছে গেলেন না। ‘আমি এখানে যা করার জন্য এসেছিলাম, তার চেয়ে বেশি করেছি’তাঁর বিদায়ি ভাষণের এই উচ্চারণও তাই যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়।
বিশ্লেষক-সমালোচকের বেশির ভাগের মতে, ট্রাম্পের এই কর্ম আসলে মার্কিন সমাজে ‘বিভাজন’ সৃষ্টি। সেই বিভাজনের বার্তাই তিনি শেষ দিনে আরো বিস্তৃত পরিসরে দিয়ে গেলেন। বিদায়ি ভাষণে তিনি একবারের জন্যও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নাম উচ্চারণ করেননি। উপরন্তু তিনি বলে গেলেন, আন্দোলন সবে শুরু করেছেন তিনি। আমেরিকাকে মহৎ করার আন্দোলন জারি থাকবে। অবশ্য এই ভাষণে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প নতুন প্রশাসনের প্রতি শুভ কামনা জানান। পরে মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেইস অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেয়া শেষ ভাষণেও ট্রাম্প ‘ভাশুরের নাম’ মুখে না নিয়ে পুনরায় বাইডেন প্রশাসনের সাফল্য কামনা করেন।
ট্রাম্পের শেষ দিন এ অর্থেও ‘নজিরবিহীন’ যে তিনি এমন অবস্থার সৃষ্টি করে বিদায় নিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জো বাইডেনকে শপথ নিতে হলো।
ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে ১৪০ জনের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করে গেলেন ট্রাম্প। ক্ষমা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন তাঁর সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন, যাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে ক্ষমার এই ঘোষণা আসে। হোয়াইট হাউস জানায়, সাজা মওকুফ করে ৭৩ জনকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করা হয়েছে। এ ছাড়া সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ৭০ জনের। তবে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য ট্রাম্প ক্ষমা ঘোষণা করেননি।
হোয়াইট হাউস থেকে মঙ্গলবার ট্রাম্পের বিদায়ি ভিডিও বার্তাটি প্রচার করা হয়। এমন সময়ে বার্তাটি প্রচার করা হলো যখন আমেরিকায় করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিদায়ি বার্তায় অবশ্য ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত করোনার টিকা নিয়ে আসার জন্য নিজের সাফল্যের দাবি করেন। যদিও বিপুল মৃত্যুর সংখ্যা তাঁর চরম ব্যর্থতার কথাই বলে।
ট্রাম্প ‘নিঃশঙ্ক ও আনন্দচিত্তে’ নিজের চলে যাওয়ার কথা বললেও এই যাওয়া ছিল মূলত ‘নিঃসঙ্গ’। গতকাল সকালে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। যদিও তিনি পরে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো ট্রাম্পের শেষ দিনের সূচি অনুযায়ী, ফ্লোরিডার পাম বিচে যাওয়ার উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া সকাল ৮টায় হোয়াইট হাউস ছাড়েন। সেখান থেকে তাঁরা শেষবারের মতো এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে যান মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেইস অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে। সেখানে ট্রাম্পকে সামরিক অভিবাদন জানানো হয়। শেষবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাষণ দেন তিনি। এরপর স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে চলে যান ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে।
ট্রাম্প আপাতত তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগীকে নিয়ে ফ্লোরিডাতেই থাকবেন। ভবিষ্যতে তিনি কী করবেন, সে ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে এরই মধ্যে তিনি পৃথক রাজনৈতিক দল গড়বেন বলে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন। পত্রিকাটি মতে, ট্রাম্পের দলের নাম ‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি’ হতে পারে।
বিদায়ি ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি বেছে নিয়েছিলেন ‘কঠিন লড়াই, সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ’। আমেরিকাকে মহৎ করার সেই লড়াই জারি রাখার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি জয়েন্ট বেইস অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতেও। দেশবাসীর উদ্দেশে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষবারের মতো বলেন, ‘আমি সব সময় আপনাদের জন্য লড়াই করে যাব।’ এ লড়াইয়ে ট্রাম্প কতটা লড়াই চালিয়ে যাবেন, তা সময় বলে দেবে। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি
Leave a Reply