গাজীউল হাসান খান এর লেখা
ট্রাম্পকে শাস্তি পেতেই হবে : অপসারণ না অভিশংসন
সারাদেশ ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া এবং কংগ্রেসের উভয় হাউসে তাঁর রিপাবলিকান দল ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যক্তিগতভাবে চরম স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর আহত আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত সংসদ ভবন আক্রমণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সেটি ছিল একদিকে বিদ্রোহ এবং অন্যদিকে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টা, যা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বরখেলাপ।
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে অর্থাৎ সংসদে নবনির্বাচিত ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনী বিজয়ের বৈধতা দিতে কংগ্রেসে উভয় হাউসের যৌথ অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকদের অনুপ্রবেশ ও আক্রমণে এ পর্যন্ত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে।
এর মধ্যে একজন ক্যাপিটলের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা। এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বিগত ২৪৪ বছরের ইতিহাসে এভাবে ঘটতে আর কখনো দেখা যায়নি।
কংগ্রেসের নির্ধারিত যৌথ অধিবেশনের দিন তার পার্শ্ববর্তী স্থানে এ ধরনের অবাঞ্ছিত বিক্ষোভ-সমাবেশে কোনো বিদায়ি প্রেসিডেন্টের ভাষণ দেওয়া এবং দলীয় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী অপশক্তিকে সংসদের অভ্যন্তরে আক্রমণ করতে ইন্ধন জোগানোর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল।
সে কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাত্ক্ষণিকভাবে দাবি জানিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক দলীয় নেত্রী (স্পিকার) ন্যান্সি পেলোসি। এই আবেদন তিনি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বিদায়ি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো মস্তিষ্ক বিকল কিংবা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে যেকোনো কারণেই হোক তা যদি সম্ভব না হয়ে ওঠে, তাহলে বর্তমান কংগ্রেসের দুই হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সোমবার,১১ জানুয়ারি একটি অভিশংসন (ইমপিচমেন্ট) প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এখন সমস্যা হচ্ছে, হাতে আছে আর মাত্র সাত থেকে আট দিন সময়। তা ছাড়া প্রতিনিধি পরিষদে ছাড়পত্র তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া গেলেও কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের জন্য সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। বর্তমানে সিনেটে ১০০ সদস্যের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের রয়েছে দুই সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এ ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের প্রয়োজন হবে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৃহত্তর সমঝোতা।
ঘটনা এভাবে এগিয়ে গেলে সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মতো অভিশংসনের হাত থেকে বাঁচতে হলে ট্রাম্পকে পদত্যাগ করে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হতে পারে। আর অভিশংসনের দিকে এগোলে এটি হবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিশংসন, যা যুক্তরাষ্ট্রে আর কখনো ঘটেনি।
এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের পর ট্রাম্পকে এরই মধ্যে দ্বিতীয় নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৬ জানুয়ারির অবাঞ্ছিত ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা,নাগরিক অধিকার এবং আইনের শাসন বিশ্ববাসীর কাছে কার্যকারিতা ও আবেদন হারিয়ে ফেলেছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ট্রাম্পের এই ধরনের স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপকে তৃতীয় বিশ্বের কোনো একনায়কতান্ত্রিক শাসকের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের অভিযোগ থাকলেও তার বিচার বিভাগ অনেক শক্তিশালী। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ভোটগ্রহণ নিয়ে ৩১টি অভিযোগ দাখিল করা হলেও ট্রাম্পের মাত্র একটি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছিল,তাতে তাঁর দাবির অসারতা কিংবা অগ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের কাছে দায়বদ্ধ। তাই তিনি যা খুশি তা-ই করতে পারেন না। কংগ্রেসের কাছে প্রেসিডেন্টের স্বেচ্ছাচারিতার বিশেষ কোনো স্থান নেই। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা বা প্রক্রিয়া (Bipartisan Approach) একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যবস্থা। সে ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ খুবই কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো প্রথাগত রাজনীতি থেকে আসেননি। এ কথা আমি আমার আগের অনেক লেখায় উল্লেখ করেছি। ট্রাম্পের যেমন নেই কোনো প্রশাসনিক পূর্বাভিজ্ঞতা, তেমনি নেই কোনো উচ্চশিক্ষা কিংবা উন্নত দর্শন। তবে আর কিছু না থাকুক, ট্রাম্পের আছে সব কিছু অগ্রাহ্য করার এক দারুণ স্পর্ধা। সব কিছু নিজের ইচ্ছামাফিক বদলে দেওয়ার প্রবল ঝোঁক।
যুক্তরাষ্ট্র মুক্তবিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও ট্রাম্প নিজে বহুত্ববাদে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর দেশকে সব দিক থেকে বিশ্বের এক নম্বরে পৌঁছানোর জন্য তিনি একটি একলা চলার পথ ধরেছিলেন। তিনি মুক্ত অর্থনীতি কিংবা মুক্ত বাণিজ্যে খুব কমই বিশ্বাস করতেন। আমেরিকাকে একচেটিয়া পুঁজিবাদের দিকে ঠেলে নিতে তিনি বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফাভিত্তিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে তাঁর লক্ষ্য বলে স্থির করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়,পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো কিংবা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) থেকেও তিনি বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্যের প্রশ্নে ঘাটে ঘাটে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু বিরোধই সৃষ্টি করেছেন, সমাধান দেননি। এসব ক্ষেত্রে আরো কঠোর হওয়ার জন্য ট্রাম্প দ্বিতীয় টার্মে শক্তিশালীভাবে ক্ষমতায় বসতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্প এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যাঁর সময়ে তাঁর রিপাবলিকান দল কংগ্রেসের দুই হাউসেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। আবার তাঁর চার বছরের শাসনকালে রিপাবলিকানরা দুটি হাউসেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। জর্জিয়া কিংবা পেনসিলভানিয়ার মতো রাজ্যও তাঁকে হারাতে হয়েছে তাঁর ভুল রাজনীতির জন্য।
উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক, বিতর্কিত কিংবা বৈষম্যমূলক আচরণ আর সময়োপযোগী সব রাষ্ট্র পরিচালনা এক নয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতি কিংবা জনপ্রতিনিধিত্ব একটি পরীক্ষিত ব্যবস্থা, যা শত বিভেদ ও বিতর্কের মধ্যেও এখনো টিকে আছে। এখানে সাদা-কালোর মধ্যে বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। কিন্তু প্রথাগত রাজনীতির বাইরে থেকে আসা ট্রাম্পের মধ্যে কোনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সে কারণেই ট্রাম্প কোনো ক্ষেত্রেই পরাভব মানতে শেখেননি। ট্রাম্প আত্মম্ভরিতাসম্পন্ন একজন একগুঁয়ে কিংবা গোঁয়ার প্রকৃতির মানুষ। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদের অভিযোগ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—সবই ছুড়ে ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন ২০১৬ সালে তাঁর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আসার আগে থেকেই। সে অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন তথ্যাভিজ্ঞ মহল থেকে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে অনেকেই ট্রাম্পকে অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণ, মেজাজি ও মানসিক দিক থেকে অশান্ত কিংবা ভারসাম্যহীন বলে উল্লেখ করেছিলেন।
তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য অনুপযুক্ত বলে মত দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাস করেন। গণমাধ্যমসহ রাজনৈতিক মহলের অনেকের ধারণা, ট্রাম্প একজন জাতীয়তাবাদী এবং চরম বর্ণবাদী। তাঁর মধ্যে হিসপানিক, লাতিনো, কৃষ্ণাঙ্গ ও জাতিগতভাবে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে এবং তিনি ইহুদি সম্প্রদায় কিংবা ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের দিকে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। এখানেই শেষ নয়। ক্ষমতাসীন হয়েই ট্রাম্প বাতিল করেছেন তখনকার প্রস্তাবিত ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি, সরে এসেছিলেন নর্থ আটলান্টিক ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (নাফটা), আন্তর্জাতিক প্যারিস পরিবেশ চুক্তি থেকে এবং নাকচ করেছিলেন বিশ্বের ছয় জাতি স্বাক্ষরিত ‘ইরান পারমাণবিক চুক্তি’।
ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সব দিক থেকে বিশ্বের এক নম্বর করার জন্য বহুজাতিক বাণিজ্য চুক্তির পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের জন্য দর-কষাকষির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালু করেছিলেন। শিক্ষিত তরুণ রিপাবলিকানদের কারো কারো মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থ ও অনেকটা গায়ের জোরে তাদের দলকে ‘হাইজ্যাক’ করেছিলেন। প্রায় ৩৩ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭৬ শতাংশ হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ। বাদবাকি অংশ হচ্ছে—কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়, হিসপানিক, লাতিনো ও অন্যরা। যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অপেক্ষাকৃতভাবে কম শিক্ষিত ও অনগ্রসর শ্বেতাঙ্গরা বাস করে দেশের নগর বা শহরাঞ্চলের বাইরে। বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অহেতুক হতাশা অনেক বেশি। তারাই হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক। তাদের বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ববাদ অর্থাৎ চরম বর্ণবাদী ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী। সে কারণেই ট্রাম্প মেক্সিকোতে বা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত শ্রমজীবী মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, তথাকথিত জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ বন্ধের অভিযোগে সাধারণ মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তা ছাড়া প্রায় দুই হাজার মাইলব্যাপী মেক্সিকো সীমান্তে স্থায়ী দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত শাসনব্যবস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার বিপর্যয় ডেকে আনা এবং বর্তমানে যা হচ্ছে অর্থাৎ ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেসব যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। আমি যুক্তরাষ্ট্রে অর্থাৎ ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসে দীর্ঘদিন প্রেস ও তথ্য বিষয়ক মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করেছি। সে কারণে ক্যাপিটল সংসদ কিংবা স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমাদের যাতায়াত ছিল। তা ছাড়া আমি যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচজন প্রেসিডেন্টের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত থেকেই পর্যবেক্ষণ করেছি। ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া অত্যন্ত কাছে থেকেই দেখেছি। দেখেছি তাঁদের অনেকের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আগমন ও বিদায়। এখন দেখছি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিণতি।
রাষ্ট্রক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের এখন অত্যন্ত আলোড়নপূর্ণ শেষ সময়। এই লেখা ছাপা হওয়া থেকে হয়তো সপ্তাহখানেক সময় বাকি থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিভাবে বিদায় নেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কি তাঁকে সরিয়ে নিজে ক্ষমতা নেবেন, নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু করবেন? তবে আর যা-ই হোক, বিদ্রোহের উসকানিদাতা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এভাবে বিদায় নিতে দেবেন না পেলোসি।
তাছাড়া রাজনীতিতে তাঁকে কিংবা তাঁর মতো মানুষের ফিরে আসার পথ পেলোসি আর রাখবেন বলে মনে হচ্ছে না। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট সর্বক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করার কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া, বৈষম্য দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও চেষ্টা করছেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সব কিছু ঢেলে সাজানোর জন্য এখন তৎপর তিনি। ট্রাম্পের সৃষ্ট দানবীয় বিপর্যয় রোধ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ আবার একটি সহনশীল বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আগ্রহী বাইডেন। এ অবস্থায় রিপাবলিকান দলের গ্রহণযোগ্যতা রক্ষায় ট্রাম্পকে অপসারণ না করা রাজনৈতিক দিক থেকে কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ হবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের জন্য? স্পিকার পেলোসি ভাইস প্রেসিডেন্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তা ছাড়া ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিশংসনের জন্যও ভোটাভুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পেলোসি। ট্রাম্পকে তাঁর কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পেতেই হবে বলেছেন স্পিকার পেলোসি।
লেখক : শব্দসৈনিক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত সাবেক মিনিস্টার
Leave a Reply