কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও মিলনায়তন (কুমিল্লা টাউন হল) ভবন আধুনিকায়নের পক্ষে মতামত জানাতে নগরবাসী রাস্তায় নেমে আসে।
জরাজীর্ণ কুমিল্লা টাউন হলের স্থানে নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের পক্ষে গণমানুষের অভাবনীয় এক জাগরণ সৃষ্টি হয়।
কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও মিলনায়তন ভবন পুরাকীর্তি হবে কি হবে না-এ বিষয়ে শনিবার ১৯ ডিসেম্বর টাউন হলের মুক্ত মঞ্চে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানীতে অংশ নিতে সকাল থেকেই কুমিল্লা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও
পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নগরীর শতাধিক পয়েন্টে অবস্থান
নেয়।
কুমিল্লা টাউন হলের জরাজীর্ণ ভবনের স্থানে নতুন টাউন হল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে তারা মাববন্ধন করে।
কুমিল্লার আলেখারচর বিশ্বরোড থেকে নগরীর চকবাজার, গোমতি পাড়ের টিক্কারচর থেকে নগরীর টমছম ব্রীজ এবং নগরীর রাজগঞ্জ থেকে নগরীর রাণীর বাজার পর্যন্ত হাজার হাজার নারী পুরুষ তাদের প্রাণের
বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও মিলনায়তন পুরাকীর্তিতে না দিয়ে ‘আধুনিক
সুবিধাসম্বলিত’ নতুন ভবন নির্মাণের দাবি তুলেন।
গণশুনানীর বিষয় তুলে ধরে শুরুতে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়
গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির আহবায়ক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব
মো. আব্দুল মান্নান ইলিয়াস।
তার বক্তৃতা শেষে গণশুনানিতে উন্মোক্ত মতামত প্রদান করে কুমিল্লার সামাজিক, সাংস্কৃতিক,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিকবৃন্দ।
গণশুনানিতে শতাধিক ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে মতামত প্রদান করেন।
গণশুননানীতে অনেকে সরাসরি বক্তব্য রেখে বলেন, কুমিল্লা টাউন হল চালু রেখেই শুধু এর ঐতিয্য রক্ষা করা সম্ভব। জরাজীর্ণ ভবন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হলে কয়েক বছরের মধ্যেই তা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে। তাই কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও মিলনায়তনের নাম ও অবয়ব ঠিক রেখে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ভবন নির্মাণ করে এটিকে সচল রাখা প্রয়োজন, পুরাকীর্তিতে দিলে তা কুমিল্লার মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। তারা বলেন, কুমিল্লা একটি প্রাচীন জেলা, ক্রীড়া, শিল্প, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় কুমিল্লা জেলা ঐতিহ্য বহন করে চলছে।
সময়ের চাহিদা অনুযায়ি বর্তমান টাউন হল ভবনটি এখন কুমিল্লাবাসীর চাহিদা পুরণ করতে পারছে না। বর্তমান ভবনটি জারাজীর্ণ ও ব্যাবহার অনুপযোগী। গণশুননানীতে অংশ নেয়া প্রায় সকলেই বর্তমান টাউন হলের স্থানে নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য দাবি করেন।
বক্তারা বলেন, মোমবাতির আলোয় অনুষ্ঠান করতে হয়, সামান্য বৃষ্টি হলেই হলটিতে পানি জমে,পুরু ভবনি এখন স্যাঁতস্যাঁতে ও জরাজীর্ণ। চার দিকের দেয়াল ভেঙ্গে পরছে। কোন প্রকার অনুষ্ঠানই বর্তমান ভবনটিতে করা যায় না।
গণশুননানীতে বক্তব্য রাখতে না পারা অনেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নতুন ভবন নির্মানের পক্ষে বিশেষজ্ঞ কমিটির রাখা বাক্সে লিখিত মতামত প্রদান করেন।
গণশুনানীতে অংশ নিয়ে মতামত প্রদান করেন, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল (অঃ) আবু তাহের, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির
সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহাম্মেদ বাবুল, কুমিল্লা জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম, কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল, আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আমিনুল ইসলাম
টুটুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রুহুল আমিন, কুমিল্লা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, বেগম রোকেয়া পদক প্রাপ্ত নারী নেত্রী পাপড়ি বসু,বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো.সেলিম, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মমিন ফেরদৌস, কুমিল্লা উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ জামাল নাসের, নারী নেত্রী রোটারিয়ান দিলনাশী মোহসেন,
আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আবুল বাশার, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক, কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন খান জম্পি, কুমিল্লা জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম, কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন, কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন,কুমিল্লা প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম,ঢাকাস্থ কুমিল্লা সদর সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড.ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিন, হাবিব উল্লাহ তুহিন, অভিবাদন সম্পাদক সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল,এনজিও ফোরামের সভাপতি লোকমান হাকিম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি কমরেড আনোয়ার হোসেন,মোহনা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই বাবলু, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী নাজমুস সাদাত,কুমিল্লা মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক জহিরুল আলম, জাগ্রত মানবিকতার সাধারন সম্পাদক তাহসিন বাহার সুচনা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শেখ জহির, আবৃতিকার আবু নাসের মানিক ও সরকারি কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুর রহমান ভূইয়া প্রমূখ।
কুমিল্লা টাউন হল নির্মাণ নিয়ে গঠিত কমিটি গত ৯ ডিসেম্বর বুধবার কুমিল্লা টাউন হল পরিদর্শন করেন। পরে কমিটির সদস্যরা কুমিল্লা সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভা করে সদস্যদের ঐক্যমতের প্রেক্ষিতে কুমিল্লা টাউন হল মিলনাতনকে আধুনিকায় করার বিষয়ে ১৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় গণশুনানি করার
সিদ্ধান্ত নেয় সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় গঠিত কমিটি।
১৯ ডিসেম্বর গণশুনানীতে উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ শওকত আলী, কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও মিলনায়তনের সভাপতি জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, স্থাপত্য অধিদপ্তরের অধ্যাপক আশিকুর রহমান ভূইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন।
এসএস//
Leave a Reply