সারাদেশ ডেস্ক: বৈশ্বিক মহামারি করোনা (কোভিড-১৯) ঠেকাতে জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যেই দুটি টিকার অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র।
মহামারিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির দেশটি শুরুতে ফাইজার ও বায়োএনটেকের তৈরি টিকার অনুমোদন দেয়। এরপর শুক্রবার ১৮ ডিসেম্বর মডার্নার তৈরি করোনার অনুমোদন দেয় দেশটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই দুটি টিকার মধ্যে মিল-অমিল তুলে ধরেছে।
দুই টিকার মধ্যে মিল:
দুটি টিকাতেই মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে মূলত মানুষের কোষে প্রোটিন তৈরির জন্য নির্দেশনা থাকে, যা করোনাভাইরাসের অংশবিশেষের অনুকরণ করে। এ নির্দেশনা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে কার্যকর করতে উৎসাহিত করে এবং শরীরকে ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকা কারখানায় পরিণত করে। এ টিকাতে কোনো প্রকৃত ভাইরাস থাকে না।
ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না দুটি টিকা করোনাভাইরাসের পৃষ্ঠে থাকা মুকুটসদৃশ স্পাইককে লক্ষ্যবস্তু বানায়। ওই স্পাইকগুলো মূলত মানবদেহের সবল কোষগুলোকে ভাঙার কাজ করে।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে দুটি টিকা প্রায় একই রকম কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকাটি পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। মডার্নার টিকাটি ৯৪ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
দুটি টিকাই দুই ডোজ করে দিতে হয়। এর মধ্যে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয়টি ডোজের জন্য ২১ দিন আর মডার্নার ক্ষেত্রে ২৮ দিনের বিরতি দিতে হয়। পরীক্ষার সময় এ দুটি টিকা যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের অসুস্থতার হার খুব সামান্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছে দুটি প্রতিষ্ঠান যে তথ্য জমা দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণের দুই সপ্তাহ পর থেকে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে আংশিক সুরক্ষা পেতে শুরু করেন টিকা গ্রহণকারী।
দুটি টিকার অমিল:
দুটি টিকার ক্ষেত্রে মূল পার্থক্য হচ্ছে তা দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার বিষয়টি। ফাইজারের টিকাটি অবশ্যই মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। একবার গলানো হলে এটি কেবল পাঁচ দিন রেফ্রিজারেটরে রাখা যাবে। এ ছাড়া টিকা পরিবহনের জন্য শুষ্ক বরফযুক্ত বিশেষ কনটেইনারের প্রয়োজন। অন্যদিকে মডার্নার টিকাটি মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত থাকবে। একবার গলানো হলে এটি রেফ্রিজারেটরে এক মাস পর্যন্ত রাখা যাবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
দুটি টিকার ক্ষেত্রেই বড় আকারের পরীক্ষা চালানোর সময় কোনো মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে সামান্য স্বল্পমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ফাইজার ও মডার্নার টিকা অবশ্য সরাসরি তুলনা করে দেখা হয়নি। তবে মডার্নার টিকায় কিছুটা বেশি মাত্রায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর প্রথম দিন বা দ্বিতীয় দিনে ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও জ্বরের উপসর্গ দেখা যায়। ৬৫ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গ বেশি দেখা যায়।
ফাইজারের টিকা মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে এই টিকার ব্যবহার শুরুর পর কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গুরুতর অ্যালার্জি দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যে দুজন ও আলাস্কায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী ফাইজারের টিকা নেওয়ার পর অ্যালার্জির কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রকের পক্ষে বলা হচ্ছে, যাঁদের অ্যানাফিল্যাক্সিস বা কোনো খাবার বা ওষুধে গুরুতর অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে, তাঁরা যেন এ টিকা না নেন।
মাস্ক কি এখনো লাগবে?
ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দুটি টিকা কতটা কার্যকর, তার সঠিক চিত্র বুঝতে আরও তথ্য প্রয়োজন। দুটি টিকা কোভিডের উপসর্গ ও মারাত্মক অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হলেও টিকা নেয়ার পর সেই রোগী থেকে নতুন কেউ সংক্রমিত হন কি না, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। যতক্ষণ তা জানা যাচ্ছে না, ততক্ষণ মাস্ক প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে টিকা পাওয়া ব্যক্তিরা যাতে করোনাভাইরাস না ছড়ান, তা নিশ্চিত হবে।
এসএস//
Leave a Reply