৩০ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস : হাইকোর্টকে অধিদফতর
- Update Time : ০২:১০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০
- / ১ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক : হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ৩০ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ১৮৪ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টের কাছে জমা দিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
সোমবার সকালে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে এমন তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এ প্রতিবেদন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার করে ধংস করা হয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, অনিবন্ধিত ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৭ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ২০৩ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল কোর্টে ১৪৩৭টি মামলা করা হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান, বাজারে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে প্রায় সাড়ে ৩০কোটি টাকার উত্তোলন করে ধংস করা হয়েছে। তার একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছি। প্রায় দেড় হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। এখানেও সাত কোটি টাকার উপরে জরিমানা করেছি।আগামী তিনমাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিরোধী অভিযানের সর্বশেষ প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এক রিট আবেদনের শুনানি হাইকোর্ট এক আদেশে হাইকোর্ট সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দেয়।
২০১৯ সালের ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট করেন ওই বছরের ১৭ জুন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন।
২০১৯ সালের ২০ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের মজুত ও বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। ওই দিন নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে বিবাদীদের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
‘৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ’ শিরোনামে ২০১৯ সালে ১১ জুন প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরো কয়েকটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান ২০১৯ সালের ১৯ জুন রিটটি করেন। ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম।
জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মজুত, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ বন্ধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য আদালত দিন রেখেছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল বাশার বলেছিলেন, সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে, বাজার থেকে তা তুলে নিতে ও ধ্বংস করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই বছর রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়িতে আ কা মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।
এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম