দিদারুল আলম, সারাদেশ বিজনেস ডেস্ক : মো.মাজিদুল হক দেশের অন্যতম শিল্প পরিবার আবদুল মোনেম লিমিটিডের অন্যতম পন্য ঈগলু’র হেড অব সেলস। যিনি সেলসে মাঠ পর্যায় থেকে আজকে দেশের স্বনামধন্য শিল্প পরিবারের ‘হেড অব সেলস’ হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। কিভাবে একজন ভালো ও সফল সেলসম্যান হওয়া যায় তার অভিজ্ঞতা সারাদেশ.নেটকে তুলে ধরেছেন।
সেল ডিপার্টমেন্ট কি ?
মাজিদুল হক: বিক্রয় যে কোন কোম্পানির একমাত্র বিভাগ যেখানে লাভ অর্জন করে থাকে আর অন্য বিভাগ তা ভোগ করে থাকে। যে কারণে সেল ডিপার্টমেন্ট সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেতন প্রমোশন ইনক্রিমেন্ট সুযোগ-সুবিধা সবটাতেই সেলসের লোক অগ্রাধিকার পায় সেলসে চাকরি খুব সহজলভ্য। তবে চ্যালেঞ্জিং এ পেশা। এখানে সফল হতে হলে কিছু কৌশল ব্যবহার করতেই হবে। যা পন্য বিক্রি বেশি করতে সাহায্য করবে।
সেলসম্যান তথা মার্কেটিং পেশার পূর্বশর্ত কি ?
মাজিদুল হক: একটা সময় ভাবা হতো,পণ্যের বিপণন কর্মকর্তারাই প্রতিষ্ঠানের পণ্য আর সেবাকে গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। কয়েক দশক ধরে এই ধারণা বদলে যাচ্ছে। এখন পণ্য থাকলেই ব্যবসা করতে পারেন না বিপণনকর্মীরা। মার্কেটিং দুনিয়াতে এখন রিলেশনশিপ মার্কেটিং কম্পিটেন্সিকে ভাবা হয় বিপণনকর্মীদের আদর্শ স্কিল। মার্কেটিং দুনিয়াতে যাঁরা পেশা গড়তে চান কিংবা যাঁরা এ পেশায় আছেন কিন্তু ক্যারিয়ারকে সামনে নিতে পারছেন না,তাঁরা গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে রিলেশনশিপ মার্কেটিং কম্পিটেন্সিকে আয়ত্ত করতে পারেন। এতে শুধু সেলসম্যানের একারই দক্ষতার বিকাশ হবে তা নয়, প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের বিপণনেও দারুণ অগ্রগতি হবে।
কিভাবে ভাল সেলসম্যন হওয়া যায়?
মাজিদুল হক : সেলসম্যান হতে চিন্তা পরিকল্পনা ও কাজ তিনটির সমন্বয় লাগবেই। কঠোর পরিশ্রম ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এখানে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। অধিকাংশ সময়ে সেলসম্যানকে মার্কেটে থাকতেই হবে পরিবেশকদের সাথে সুসর্ম্পক বজায় রাখতে হবে। তাদের মন মানসিকতা বুঝতে হবে। কিভাবে কোন কৌশল নিয়ে পরিবেশক খুশি থাকবে সে অনুযায়ী পন্য উত্তোলন করতে হবে। মার্কেট সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। কোন রুটে কতটি দোকান এর মধ্যে কয়টি খুচরা বিক্রেতা, পাইকারি বিক্রেতা মার্কেটে কোন কোম্পানির পন্য বেশি তার তথ্য থাকতে হবে। বিক্রি বৃদ্ধিতে ট্রেড রিলেশন এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেলস-এ কাজের ধরণ কিরূপ ?
মাজিদুল হক : সেলস হলো টার্গেট অরিয়েন্টেড জব। টার্গেট বেশি হয়ে গেছে কখনো এমন কথা বলা যাবে না এটা টপ ম্যানেজমেন্টের চরম অপছন্দ। টার্গেট ইচ্ছামত দেয়া হয় না, বিভিন্ন সময় এর সেলস ডাটা এনালাইসিস করে টার্গেট দেয়া হয়। টার্গেট নিয়ে আপত্তি তুলবেন, ম্যানেজমেন্ট ভাববে আপনি বিক্রি বাড়াতে চান না কিংবা চ্যালেঞ্জ নিতে অক্ষম। টার্গেট অধীনস্থদের বন্টন করতে হয়। পাশাপাশি টার্গেট অর্জনে তাদের সাহায্য বুদ্ধি পরামর্শ দিতে হয়। সেলস টিমের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করতে হয়।
সেলসম্যানকে কি টেকনিক জানতে হয় ?
মাজিদুল হক : সবার প্রথমেই সেলসম্যানকে কিছু প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে জেনে নিতে হবে। পণ্যের কোন দিকটি সবচেয়ে ভালো? কাস্টমার বা গ্রাহক সংশ্লিষ্ট পণ্যের বা সার্ভিসের কোন দিকটি বেশি পছন্দ করে, পণ্যের জন্য তারা কত ব্যয় করতে ইচ্ছুক ইত্যাদি। এই প্রশ্নগুলোর পরিষ্কার উত্তর যদি আপনার কাছে না থাকে তাহলে পণ্যের বা সার্ভিস সঠিক ভাবে তাদের সামনে তুলে ধরতে পারা যাবে না। বিক্রয় যেন হয় ক্রেতার প্রয়োজন। কোন অপ্রয়োজনীয় পণ্য বা সার্ভিস কেউ কিনবে না। প্রয়োজনের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বদিন এবং প্রয়োজনকে বিক্রয় করুন। মাজিদুল বলেন, সেলসম্যানের সফলতার পিছনে ৩টি ম্যাজিক পদক্ষেপ থাকতেই হয়, তা হল জিজ্ঞাসা করুন, শুনুন এবং পদক্ষেপ গ্রহন করুন। ব্যবসায়ে এই ৩টি পদক্ষেপ এর প্রয়োগ না হলে সেল বৃদ্ধি পাবে না। তাই প্রথমে জিজ্ঞাসা করুন গ্রাহক বা কাস্টমারকে তার প্রয়োজন কি? তিনি আপনার থেকে কি চান? কাস্টমার বা গ্রাহক আপনার কাছে সকল কিছু বললেও অনেক কিছু বাকি থেকে যায় বা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। সেই বিষয় গুলো আপনাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে তাদের কথা ভালোভাবে শুনতে হবে এবং সে অনুসারে কাজ করতে হবে। তাহলেই কাস্টমারকে সঠিক সার্ভিস দিতে পারবেন এবং সন্তুষ্ট করতে পারবেন। যা আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি করবে এবং সেলসম্যান হিসেবে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
সেলসম্যানকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষন প্রয়োজন আছে কি ?
মাজিদুল হক : একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা হল প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সম্পদ। এই সম্পদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়। এজন্য বিক্রয় প্রতিনিধি বা সেলসম্যানকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষন দিতে হয়। কিভাবে কাস্টমারের সাথে কথা বলতে হবে, কিভাবে কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে পরিপূর্ন ধারণা রাখা, কাস্টমারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষন অনিবার্য। মনে রাখতে হবে কাস্টমার কোন প্রশ্ন করলে সেই প্রশ্নের উত্তর যেন সে সঠিকভাবে পায়। সকল ক্ষেত্রে তাদের আত্ববিশ্বাস বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হয়। কারণ কর্মীদের আত্ববিশ্বাস পণ্য বিক্রয়ে অনেক সহায়তা করে।
সেলসম্যান পেশার জন্য কি প্রয়োজন ?
মাজিদুল হক : যিনি সেলসম্যান হিসেবে কাজ করছেন তার আগ্রহ চিন্তা পরিকল্পনা আত্ববিশ্বাস ও কাজ তাকে সফলতা এনে দেয়। পরিশ্রমী আত্ববিশ্বাসী তরুনরা সেলসম্যান হিসেবে পেশা বেছে নিলে সফল হবেন এটা আমার বিশ্বাস। তবে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও স্মার্টনেজ জরুরি বিষয়। এ পেশায় হাজার হাজার তরুণ এখন সফল হচ্ছে।
সেলসম্যান বা মার্কেটিং-এ প্রযুক্তি কতটা জরুরী ?
মাজিদুল হক : তথ্য-প্রযুক্তি প্রসারে এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলসম্যান, মার্কেটিং-এ অসংখ্য তরুণ-তরুণী সফল হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার এ পেশায় নতুন মাত্রা ও বিপ্লব সাধন করেছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার জানা এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কেননা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার এক ধরণের প্রতিযোগিতাও তৈরী করেছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এতে এটি রপ্ত করা ছাড়া বিকল্পও নেই।
ডিএ/এসএস//
Leave a Reply