নিজস্ব প্রতিবেদক : চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে এবারো ভোটারদের মধ্যে সংশয় ও ভীতি বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে ৩ ডিসেম্বর চান্দিনায় মেয়র পদপ্রার্থী বাছাই সভায় যাওয়ার পথে দুপক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতাসহ কয়েকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চান্দিনা থানা কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
দলীয় মেয়র পদপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শওকত হোসেন ভূঁইয়া ও বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। জানা গেছে, মেয়র পদের তিনজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর মধ্যে এ দুই নেতাকে রেখেছে চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ।
আহত ব্যক্তিরা হলেন চান্দিনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন (৪০), যুবলীগ নেতা মো. শাহিন (৩৫), ছাত্রলীগের কর্মী মো. রাসেল (২২) ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ ক্রীড়া সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (১৮)।
দলীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র পদে তিনজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছে। তাঁরা হলেন বর্তমান মেয়র মফিজুল ইসলাম, মো. শওকত হোসেন ভূঁইয়া ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল।
দলীয় সূত্র আরো জানায়, আগামী ১৬ জানুয়ারি এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচন সামনে রেখে চান্দিনা মহিলা কলেজ মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভা হয়। সভার দিন থানাসংলগ্ন এলাকায় শওকত হোসেন ভূঁইয়ার অনুসারী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও চান্দিনা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল করছিলেন। এ সময় বর্তমান পৌর মেয়র মফিজুল ইসলামের অনুসারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে একই এলাকা দিয়ে শোডাউন করে যাচ্ছিলেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মুন্সী দাবি করেন, ‘পৌর মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. মফিজুল ইসলামের অনুসারীরা আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান।’
অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ধিত সভায় যোগ দিতে আমার নেতা-কর্মীরা মোটর সাইকেলযোগে সভাস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় থানাসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা পেছন দিকে থেকে অতর্কিত হামলা চালায়।’
সারাদেশ প্রতিনিধি চান্দিনা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ ও এলাকা ঘুরে দেখেছেন। সারাদেশ প্রতিনিধিকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের সূযোগ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন।
অনেক ভোটার জানান, সর্বশেষ ২০১৬ সালের পৌর নির্বাচনে তারা ভোট দেয়ার সূযোগ পাননি। কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নেয়ায় তারা সে সূযোগ পাননি। বর্তমান মেয়র পৌরবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করতে পারেননি বলে অনেকে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মেয়র মফিজ পৌর এলাকায় জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন অবকাঠামো এবং নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন ঘটাতে না পারলেও নিজের আখের গুছিয়েছেন।
বর্তমান মেয়র মফিজের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ তুলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষ জানান পৌরসভার প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচন ছিল সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক। মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সূযোগ পেয়েছিলেন। এই পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্দুল মান্নান সরকার, দ্বিতীয় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আলমগীর খান।
বর্তমান মেয়র মফিজুল ইসলাম এ পৌরসভার তৃতীয় মেয়র। স্থানীয়রা জানান, মফিজ একসময় কাউন্সিলর পদে লড়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন লাভ ও দল ক্ষমতাকে পূঁজি করে প্রভাব খাটিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এবারো দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে ঘটছে হামলার ঘটনাও।
আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটাররা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে স্থানীয়রা আশা করছেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত এবং একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ইতোমধ্যে বিএনপি পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র আলমগীর খানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এসএস//
Leave a Reply