কুমিল্লা প্রতিবেদক : ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় কুমিল্লা জেলা।
১৯৭১ সালের এই দিনে জেলার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের ধ্বনি। উত্তোলিত হয় লাল-সবুজের পতাকা।
মুক্তির স্বাদ পাওয়া হাজার হাজার মানুষের জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে কুমিল্লার জনপদ।
কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে।
জেলার বিবির বাজার, নিশ্চিন্তপুর, চৌদ্দগ্রাম, বেলুনিয়া, ইটাল্লা ও মাঝিগাছায় মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা।
নভেম্বরের শেষের দিকে হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পিছু হঠে।
২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদিঘী এলাকা দখল করে নেন। এ এলাকাটিই কুমিল্লার প্রথম মুক্তাঞ্চল। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ আরও জোরালো হয়। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর যোদ্ধারা কুমিল্লার ময়নামতি আক্রমণের প্রস্তুতি নেন।
ওই রাতেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল আর ডি হিরার নেতৃত্বে ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের দায়িত্বে যৌথ বাহিনীর ৩০১ মাউন্ট ব্রিগেড ও মুক্তিবাহিনীর ইর্স্টান সেক্টর লালমাই পাহাড় ও লাকসামে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙে ফেলে।
তারা লাকসাম-কুমিল্লা সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। লাকসামের মুদাফফরগঞ্জে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়।
সংর্ঘষে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয় ও ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মুদাফফরগঞ্জ।
পরদিন ৭ ডিসেম্বর ঢাকার সঙ্গে ময়নামতির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মুক্তিবাহিনী। এদিকে লাকসাম ঘাঁটি রক্ষায় পাকিস্তানি বাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্ট কুমিল্লা বিমানবন্দর (বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেড) সংলগ্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নেয়।
ওইদিন মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক সংর্ঘষ হয়। পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী পিছু হটে ও সেনানিবাসে অবস্থান নেয়। এ সংঘর্ষে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
রাতেই বিমানবন্দরে পাক বাহিনীর পতন ঘটে। ভোর রাতে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মুক্ত কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে। ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত হলেও পাকিস্তানি বাহিনী তখনও কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থান করছিলো। বিভিন্ন স্থান থেকে পাক বাহিনী পিছু হটে এ গ্যারিসনে পরপর তিনটি বুহ্যের সৃষ্টি করে ট্যাংক ও কামান বহর দিয়ে অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে।
যৌথ বাহিনী ময়নামতি গ্যারিসন অবরোধ করে অনবরত প্লেন হামলা পরিচালনা করে। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৬ ডিসেম্বর ময়নামতি গ্যারিসনও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
এখানে পাকিস্তানি ২৫জন ব্রিগেডিয়ার, ৭৬ জন অফিসার, ১৭৫ জন জেসিও এবং ৩ হাজার ৯১৮ জন সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।
ময়নামতি গ্যারিসন ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত হলেও কুমিল্লা শহর ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কুমিল্লার প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ৮ ডিসেম্বর বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে।
এসএস//
Leave a Reply