সারাদেশ ডেস্ক : পানি শরীরের কোষগুলোকে পুষ্টি শোষণ করতে ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে। শীতের দিনগুলোতে গরম পানি পানের গুরুত্ব আরো বেশি, কারণ সংক্রমণের তীব্রতা প্রতিরোধ হতে পারে।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ঠান্ডা পানি পরিহার না করলে তীব্রতা বেড়ে মারাত্মক পরিণতির ঝুঁকি রয়েছে। তাই সারাবছর না হলেও অন্তত শীতকালে গরম পানি পান করা উচিত ।
এখানে শীতে গরম পানি পানের উল্লেখযোগ্য উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ক্ষুদ্রান্ত খাবার ও পানীয়ের বেশিরভাগ পানি শোষণ করে নেয়। এটা ডিহাইড্রেশন (শারীরিক পানিশূন্যতা) সৃষ্টি করে ও মলত্যাগকে কঠিন করে তোলে। দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন থেকে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যে মলত্যাগে যন্ত্রণা হয় ও অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে (যেমন- পাইলস ও পেটফাঁপা)। কিন্তু নিয়মিত গরম পানি পান করলে খাবার দ্রুত ভেঙে নিয়মিত মলত্যাগ হবে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমবে। শীতকালে কিছু লোকের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা দেখা দেয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য তথা মলত্যাগে যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি এড়াতে শীতের দিনগুলোতে গরম পানি পানের কথা বিবেচনা করতে পারেন।
কিছু গবেষণা ধারণা দিয়েছে যে গরম পানি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) দূরীকরণে সহায়তা করতে পারে। তবে এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতভেদ রয়েছে। যদি গরম পানি কোনো ব্যক্তির শারীরিক তাপমাত্রাকে বাড়াতে সক্ষম হয়, তাহলে ঘাম বের হবে। এমনটা ঘটলে ঘামের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যাবে ও ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার হবে। শীতকালে শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণ কমে যায় বলে বিষাক্ত পদার্থ বেড়ে যেতে পারে। তাই এসময় শরীরকে ঘামাতে কুসুম গরম পানি পানের গুরুত্ব রয়েছে।
গরম পানি ভাসোডাইলেটর হিসেবে কাজ করতে পারে। এর মানে হলো- এটা রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্ত চলাচল বাড়াতে পারে। এতে পেশি শিথিল হয় ও ব্যথা কমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কুসুম গরম পানি পানে রক্তপ্রবাহ একটুখানি বাড়লেও শরীরের পেশি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উপকৃত হবে। কম তাপমাত্রায় রক্তনালী বা ধমনীগুলো সংকুচিত হয়ে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, ফলে হার্টে অক্সিজেনের প্রবাহও হ্রাস পায়। রক্তনালী সংকুচিত হয়ে গেলে হার্টকে রক্ত পাম্প করতে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়, যেকারণে রক্তচাপ ও হার্ট রেট বেড়ে যায়। তাই শীতকালে হার্টকে সাহায্য করতে কুসুম গরম পানি পানের কথা ভাবতে পারেন।
গরম পানি অ্যাকালেসিয়ায় সহায়ক হতে পারে।অ্যাকালেসিয়া হলো এমন একটা স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে খাদ্যনালীর নিম্নভাগ শিথিল হতে ব্যর্থ হয়। এটা খাবারকে পাকস্থলিতে পৌঁছতে দেয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, গরম খাবার অথবা গরম পানীয় খাদ্যনালীর নিম্নভাগকে শিথিল হতে সাহায্য করে। অ্যাকালেসিয়ার একটি প্রচলিত উপসর্গ হলো বুক ব্যথা। একটি গবেষণায় গরম পানি পানে ৮৮ শতাংশ অ্যাকালেসিয়া রোগীর বুক ব্যথা কমেছে। প্রকৃতপক্ষে, ঠান্ডা পানি পানে অ্যাকালেসিয়া উপসর্গ তীব্র হতে পারে। তাই গলায় খাবার/পানীয় আটকে আছে প্রকৃতির অনুভূতি হলে কুসুম গরম পানি পানের গুরুত্ব কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশেষ করে শীতকালে।
কে না জানে শীতকালে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বেড়ে যায়। এসময় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ অথবা উপশম করতে একটা বহুল প্রচলিত পরামর্শ হলো- গরম পানিকে হ্যাঁ বলুন। গরম পানি বন্ধ হয়ে যাওয়া নাক বা সাইনাস খুলতে সাহায্য করে, শ্বাসতন্ত্রের শ্লেষ্মা পাতলা করে ও শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে গরম পানি পান করলে উপসর্গের তীব্রতা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। এটা মনে রাখা ভালো যে শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণে ঠান্ডা পানি পান করলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। তাই শীতের শুরু থেকেই প্রতিদিন কুসুম গরম পানি পান করলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ জনিত মারাত্মক পরিণতি প্রতিরোধ হতে পারে।
এসএস//
Leave a Reply