Dhaka ০৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার

‘খাসিয়া’সেজেছিলেন এসআই আকবর,‘সিনিয়র অফিসার’পালাতে বলেছিলেন

  • Update Time : ০৭:১১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০২০
  • / ১ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে যুবক রায়হানকে হত্যার ঘটনার পর এক সিনিয়র অফিসারের পরামর্শে পালিয়ে যান এসআই আকবর। তাকে খাসিয়া পল্লীর লোকজন আটকের পর ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে তার মূখে এ কথা শুনা যায়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, মুখে দাড়ি। পরনে খয়েরি রঙের ফুল হাতা শার্ট। নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখা কোমর। প্রথম দর্শনে কারোই বুঝতে পারার কথা নয় যে তিনি সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির একসময়ের ইনচার্জ ও বর্তমানে বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞা। পালিয়ে ভারতের খাসিয়াপল্লিতে আশ্রয় নেয়ার কারণ অনেকটা কান্নার সুরে বলছিলেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার পালাতে বলেছিলেন। তাই আমি পালিয়েছি। আমি মারিনি ভাই । সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ডোনা এলাকা থেকে আকবরকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে সোপর্দ করার আগের ভিডিওতে এ রকম চিত্র দেখা গেছে। ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মূহুর্তেই এটি ভাইরাল হয়ে যায়।

দুই মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী দুটো ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রথম ভিডিওটি দুই মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের। এতে দেখা গেছে, আকবরকে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা। দুই হাত পেছনে রেখে রশি টাঙিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। এ সময় আকবর বলেন, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার বলেছেন, তুমি চলে যাও, দুই মাস পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসবা।আমি মারিনি ভাই।

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা গেছে আকবর বসা। ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড স্থায়ী এই ভিডিওতে শোনা যায়, আকবরকে নাম জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এ সময় আকবর বসা ছিলেন। নাম কি? জানতে চাওয়ায় আকবর দুই হাত জোড় করে বলেন, ‘আমি আকবর’। ‘তুমি আকবর, তুমি তো পালাইয়া আসছো, হত্যা করছো?’জবাবে আকবর বলেন, ‘না, ভাই আমি মারিনি। হাসপাতালে নিয়েছি।’এ সময় সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মাইরও না। এইটা বাংলাদেশি।…বিচার হবে। বিচার করবে তাঁরা।

আকবর ‘আমি বাঁচব না ভাই’ বলে প্রলাপ বকছিলেন। আকবরকে নাম জিজ্ঞেস করার সময় হাতজোড় করে থাকতে দেখা যায়। যারা তাঁকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন, তাঁদের কথাবার্তা বাংলা হলেও খাসিয়াদের মতো টান ছিল। আর আকবরের গলায় পুঁথির মালা ছিল। অনেকটা খাসিয়া যুবকের মতো সাজে ছিলেন আকবর। কথাবার্তার একপর্যায়ে পানির বোতল এগিয়ে দেওয়া হয় আকবরকে।

ভিডিওতে যে স্থানে আকবরকে দেখা গেছে, সেটি পাহাড়ি এলাকা। ঝোপঝাড় ও ঝরনা মাড়িয়ে আকবরকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর আকবরকে বাংলাদেশের পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশে সোপর্দ করার আগে আকবরকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধরা হয়। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

ডোনা সীমান্ত এলাকার ওপারে মেঘালয় রাজ্য। পাহাড়ের পাদদেশজুড়ে ভারতের খাসিয়াপল্লি। সিলেট নগরীর আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেনসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিন থেকে তিনি লাপাত্তা ছিলেন।

গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রের ধারণা, আকবর পালিয়ে ভারতে চলে যান। সিলেটের আরেক সীমান্ত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা সীমান্ত হয়ে আকবর খাসিয়াপল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং দফায় দফায় কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার ওপারে ভারতের খাসিয়াপল্লিতে অবস্থান করছিলেন।
আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে আকবরের অধীনস্থ বন্দরবাজার ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ২২ অক্টোবর। এ সময় পুলিশের সদর দপ্তরের তদন্তে আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী একজন সিনিয়র অফিসারের নামও আসে। ধরার সময় ভিডিওতে আকবর একাধিকবার সিনিয়র অফিসারের পরামর্শে পালানোর কথা বললেও কোনো নাম বলেননি।

এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

‘খাসিয়া’সেজেছিলেন এসআই আকবর,‘সিনিয়র অফিসার’পালাতে বলেছিলেন

Update Time : ০৭:১১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশ হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে যুবক রায়হানকে হত্যার ঘটনার পর এক সিনিয়র অফিসারের পরামর্শে পালিয়ে যান এসআই আকবর। তাকে খাসিয়া পল্লীর লোকজন আটকের পর ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে তার মূখে এ কথা শুনা যায়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, মুখে দাড়ি। পরনে খয়েরি রঙের ফুল হাতা শার্ট। নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখা কোমর। প্রথম দর্শনে কারোই বুঝতে পারার কথা নয় যে তিনি সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির একসময়ের ইনচার্জ ও বর্তমানে বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞা। পালিয়ে ভারতের খাসিয়াপল্লিতে আশ্রয় নেয়ার কারণ অনেকটা কান্নার সুরে বলছিলেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার পালাতে বলেছিলেন। তাই আমি পালিয়েছি। আমি মারিনি ভাই । সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ডোনা এলাকা থেকে আকবরকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে সোপর্দ করার আগের ভিডিওতে এ রকম চিত্র দেখা গেছে। ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মূহুর্তেই এটি ভাইরাল হয়ে যায়।

দুই মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী দুটো ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রথম ভিডিওটি দুই মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের। এতে দেখা গেছে, আকবরকে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা। দুই হাত পেছনে রেখে রশি টাঙিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। এ সময় আকবর বলেন, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার বলেছেন, তুমি চলে যাও, দুই মাস পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসবা।আমি মারিনি ভাই।

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা গেছে আকবর বসা। ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড স্থায়ী এই ভিডিওতে শোনা যায়, আকবরকে নাম জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এ সময় আকবর বসা ছিলেন। নাম কি? জানতে চাওয়ায় আকবর দুই হাত জোড় করে বলেন, ‘আমি আকবর’। ‘তুমি আকবর, তুমি তো পালাইয়া আসছো, হত্যা করছো?’জবাবে আকবর বলেন, ‘না, ভাই আমি মারিনি। হাসপাতালে নিয়েছি।’এ সময় সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মাইরও না। এইটা বাংলাদেশি।…বিচার হবে। বিচার করবে তাঁরা।

আকবর ‘আমি বাঁচব না ভাই’ বলে প্রলাপ বকছিলেন। আকবরকে নাম জিজ্ঞেস করার সময় হাতজোড় করে থাকতে দেখা যায়। যারা তাঁকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন, তাঁদের কথাবার্তা বাংলা হলেও খাসিয়াদের মতো টান ছিল। আর আকবরের গলায় পুঁথির মালা ছিল। অনেকটা খাসিয়া যুবকের মতো সাজে ছিলেন আকবর। কথাবার্তার একপর্যায়ে পানির বোতল এগিয়ে দেওয়া হয় আকবরকে।

ভিডিওতে যে স্থানে আকবরকে দেখা গেছে, সেটি পাহাড়ি এলাকা। ঝোপঝাড় ও ঝরনা মাড়িয়ে আকবরকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর আকবরকে বাংলাদেশের পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশে সোপর্দ করার আগে আকবরকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধরা হয়। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

ডোনা সীমান্ত এলাকার ওপারে মেঘালয় রাজ্য। পাহাড়ের পাদদেশজুড়ে ভারতের খাসিয়াপল্লি। সিলেট নগরীর আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তাঁর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেনসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরের দিন থেকে তিনি লাপাত্তা ছিলেন।

গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রের ধারণা, আকবর পালিয়ে ভারতে চলে যান। সিলেটের আরেক সীমান্ত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা সীমান্ত হয়ে আকবর খাসিয়াপল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং দফায় দফায় কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার ওপারে ভারতের খাসিয়াপল্লিতে অবস্থান করছিলেন।
আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে আকবরের অধীনস্থ বন্দরবাজার ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ২২ অক্টোবর। এ সময় পুলিশের সদর দপ্তরের তদন্তে আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী একজন সিনিয়র অফিসারের নামও আসে। ধরার সময় ভিডিওতে আকবর একাধিকবার সিনিয়র অফিসারের পরামর্শে পালানোর কথা বললেও কোনো নাম বলেননি।

এসএস//