Dhaka ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার

যুগান্তকারী রায় : দন্ডিত থাকবেন পরিবারের সঙ্গে, সংশোধনের সূযোগ দিয়ে হাইকোর্ট

  • Update Time : ০১:৫৬:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ নভেম্বর ২০২০
  • / ১ Time View

আদালত প্রতিবেদক : মাদক মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শরীয়তপুরের মতি মাতবরকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় দেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে হাইকোর্টে প্রবেশন বিশেষ আইনে প্রথম রায়। রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে আনা আবেদন গ্রহণ করে আসামির রিভিশন খারিজ করে দিয়েছেন। তাকে যে শর্তগুলো মানতে হবে, ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মায়ের যতœ নিতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে। আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না।

আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি সারাদেশ’কে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, এ ধরণের আদেশ দেশের বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী ও নজিরবিহীন। তিনি বলেন, দন্ডিতকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে দেড় বছর প্রবেশনে থাকাকালীন উল্লেখিত তিনটি শর্ত পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি মতি মাতবরের ৫ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিভিশন মামলার রায়ে আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন দেন। আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রবেশন অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদ। আদেশের পরপরই আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে তার তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেয়া হয়। শর্ত ভাঙ্গলে তার প্রবেশন বাতিল হবে বলেও আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মতি মাতবর এবং অপর একজন আসামির কাছে ৪১১ পিস এবং ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে চার্জশিট দাখিল করে। এই মামলায় ৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে যুগ্ম মহানগর হাকিম আদালত আসামিদের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মতি মাতবর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতারের পর দীর্ঘ ২০ মাস কারাভোগ করেন। ২০১৭ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন।

বিচারিক আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে মহানগর দায়রা আদালতে ফৌজদারী আপিল করা হয়। ১১ মে ২০১৭ তারিখে আপিল শুনানি নিয়ে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে আসামি মতি মাতবর ১ জুলাই ২০১৭ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন মামলাটি দায়ের করেন।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, রিভিশনের শুনানিতে আসামিপক্ষে এ মামলায় প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী আদেশ দেয়া যেতে পারে বলে আর্জি পেশ করা হয়।

এ আইনজীবী বলেন, যেহেতু তার এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই, তিনি ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করবেন মর্মে ধারণা করার মতো কোনো তথ্যও নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পূণর্বাসন সমিতি, ঢাকাকে নির্দেশ দেন। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালত আসামির বিষয়ে আরও একটি (এন্টিসিডেন্ট রিপোর্ট) প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে আসামির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়।

ডিএ//এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

যুগান্তকারী রায় : দন্ডিত থাকবেন পরিবারের সঙ্গে, সংশোধনের সূযোগ দিয়ে হাইকোর্ট

Update Time : ০১:৫৬:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ নভেম্বর ২০২০

আদালত প্রতিবেদক : মাদক মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শরীয়তপুরের মতি মাতবরকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রবেশনে পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় দেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে হাইকোর্টে প্রবেশন বিশেষ আইনে প্রথম রায়। রায়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে আনা আবেদন গ্রহণ করে আসামির রিভিশন খারিজ করে দিয়েছেন। তাকে যে শর্তগুলো মানতে হবে, ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মায়ের যতœ নিতে হবে। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হবে। আইন অনুসারে নির্ধারিত বয়সের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না।

আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি সারাদেশ’কে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, এ ধরণের আদেশ দেশের বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী ও নজিরবিহীন। তিনি বলেন, দন্ডিতকে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে দেড় বছর প্রবেশনে থাকাকালীন উল্লেখিত তিনটি শর্ত পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি মতি মাতবরের ৫ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিভিশন মামলার রায়ে আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশন দেন। আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রবেশন অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদ। আদেশের পরপরই আসামিকে তাৎক্ষণিকভাবে তার তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেয়া হয়। শর্ত ভাঙ্গলে তার প্রবেশন বাতিল হবে বলেও আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মতি মাতবর এবং অপর একজন আসামির কাছে ৪১১ পিস এবং ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ২৪ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে চার্জশিট দাখিল করে। এই মামলায় ৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে যুগ্ম মহানগর হাকিম আদালত আসামিদের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মতি মাতবর ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতারের পর দীর্ঘ ২০ মাস কারাভোগ করেন। ২০১৭ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন।

বিচারিক আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে মহানগর দায়রা আদালতে ফৌজদারী আপিল করা হয়। ১১ মে ২০১৭ তারিখে আপিল শুনানি নিয়ে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে আসামি মতি মাতবর ১ জুলাই ২০১৭ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন মামলাটি দায়ের করেন।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, রিভিশনের শুনানিতে আসামিপক্ষে এ মামলায় প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী আদেশ দেয়া যেতে পারে বলে আর্জি পেশ করা হয়।

এ আইনজীবী বলেন, যেহেতু তার এটিই প্রথম অপরাধ এবং আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই, তিনি ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করবেন মর্মে ধারণা করার মতো কোনো তথ্যও নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পূণর্বাসন সমিতি, ঢাকাকে নির্দেশ দেন। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালত আসামির বিষয়ে আরও একটি (এন্টিসিডেন্ট রিপোর্ট) প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে আসামির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়।

ডিএ//এসএস//