হাসান আহমেদ সওদাগর,যুক্তরাষ্ট্র/সারাদেশ নিউজ ডেস্ক:বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
৩ নভেম্বর হয়ে গেলো চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ। যদিও এবার মহামারি করোনাসহ নানাহ কারণে প্রায় ১০ কোটি মার্কিনি আগাম ভোট প্রদান করেছেন। চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে তাকিয়ে এখন গোটা বিশ্ব।
পরিসংখ্যান বলছে, তিন দশকের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচাইতে
উত্তেজনাকর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ হাসিটা তিনিই হাসবেন বলে পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে।
টানা তিনদিনের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তির পথে মার্কিনিরাও। বিশ্ব অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করছে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন কতটা তীব্র হতে পারে।
সর্বশেষ সুইংস্টেটগুলোতে পিছিয়ে থেকেও জো বাইডেন বার বার দাবি তুলতে থাকেন ‘এভরি ভোট শুড বি কাউন্টেড’। অর্থাৎ প্রতিটি ভোট গণনা করতে হবে। ৩রা নভেম্বর নির্বাচনের পর তিনদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন নির্বাচনের ফল পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা, উদ্বেগ দেখা দেয় পুরো বিশ্বে ।
ফক্স ও ইয়াহু’র নিউজ বলছে, ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে জো বাইডেন ২৬৪ তে দাঁড়িয়ে আর ট্রাম্প ২১৪। এখানে এসেই আকস্মিকভাবে থমকে দাঁড়ায় নির্বাচনের ফল।
জো বাইডেনের প্রয়োজন আর মাত্র ৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। ট্রাম্পের প্রয়োজন ৫৬ ভোট। এমন অবস্থা চলে দীর্ঘ সময়। এ সময় মূল যুদ্ধ শুরু হয় সুইংস্টেট নেভাদা, পেনসিলভ্যানিয়া, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায়। নেভাদায় অল্প ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। তবে সেখানে যে তিনি জিতবেন এমনটা নিশ্চিত ছিলনা। শুরু হয় বিশ্লেষণ। বলা হয়, এখানে তিনি জিতলেই পেয়ে যাবেন এ রাজ্যের মোট ৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। ফলে তিনি পৌঁছে যাবেন ম্যাজিক নাম্বার ২৭০-এ। অন্যদিকে সম্ভাবনা উঁকি দিতে থাকে জর্জিয়া থেকে। সেখানে পিছিয়ে থাকা বাইডেন ক্রমশ লিড নিতে থাকেন।
শুক্রবার ৬ নভেম্বর দুপুর নাগাদ তিনি ট্রাম্পের চেয়ে ৪৫০ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন এ রাজ্যে। কিন্তু দুপুর তিনটার দিকে ট্রাম্পকে টপকে যান বাইডেন। তিনি এক হাজারের মতো ভোটে এগিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব মিডিয়ার সংবাদ শিরোনাম পাল্টে যেতে থাকে। বাইডেনের গতিতে ‘মোমেন্টাম’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়।
কোন কোন মাধ্যম লিখে ফেলে ‘জর্জিয়ায় অল্প ব্যবধানে এগিয়ে বাইডেন, পথ করে নিলেন হোয়াইট হাউসের’। সেই জর্জিয়াতেই তিনি বিজয়ের হাসি হাসবেন এমনটা যেন সময়ের ব্যাপার। এখানে আছে ১৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। ২৬৪ এর সঙ্গে তা যুক্ত হয়ে দাঁড়ায় ২৮০। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীর প্রয়োজন ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট।
নির্বাচনে জনগণের মত মেনে নেয়ার পরিবর্তে ভোট কারচুপি, ভোট চুরির অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। তবে সব মিডিয়াই তার এমন দাবিকে ‘ফলস্লি’ বলে দাবি করে।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে দাবি করেন ডেমোক্রেটরা ভোটে কারচুপির চেষ্টা করছে। তার এ বক্তব্য তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। উপস্থাপক জানিয়ে দেন, ট্রাম্পের এ বক্তব্য সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া তিনি ভোটে কারচুপির মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেন কয়েকটি রাজ্যে। তার মধ্যে জর্জিয়া ও মিশিগানে আইনি লড়াইয়ে তিনি হেরে যান। আদালত রায়ে বলে, ভোট কারচুপির কোনো প্রমাণ নেই। তাই ওই মামলা খারিজ করে দেয় আদালত। তবে ট্রাম্প টিম নেভাদায় অনিয়মের অভিযোগে মামলা করে। বৃহস্পতিবার ফিলাডেলফিয়াতে ভোট গণনা বন্ধের জন্য জরুরি আবেদন করে ট্রাম্প টিম। কিন্তু তাদের সেই আবেদনও প্রত্যাখ্যান করেন একজন ফেডারেল জজ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামার সাথে রিপাবলিকান প্রার্থী ছিলেন উইলার্ড মিট রমনি। তিনি এই নির্বাচনে কারচুপি, ভোট চুরির অভিযোগকে ভূল বলে মন্তব্য করেন।
বিবিসি নিউজও জানিয়েছে, সিনিয়র রিপাবলিকান মিট রমনি এবং মেরিল্যান্ড গভর্নর ল্যারি হগান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খাটো করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।
রমনিকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্টও বলছে, প্রতিটি ভোট গণনা করা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
‘ভোট গণনা করা হবে। যদি কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকে তাহলে সেটির তদন্ত হবে এবং শেষ বিচারে আদালতে নিষ্পত্তি হবে। গণতন্ত্রের উপর আস্থা রাখুন, আমাদের সংবিধান এবং আমেরিকার জনগণের উপর আস্থা রাখুন,’ বলেন রমনি।
সিএনএন বলছে, টেক্সাসের রিপাবলিকান নেতা উইল হার্ড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যক্রমকে ‘বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
হার্ডের টুইট বার্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন লিখেছে, ‘প্রেসিডেন্ট আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করছেন এবং কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই আমেরিকানদের বৈধ মতামত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এটা শুধু বিপদজনক এবং ভুলই নয়, যে ভিত্তির উপর আমাদের জাতি দাঁড়িয়ে আছে সেটিকেও অবজ্ঞা করা হচ্ছে।’
বিবিসি নিউজ বলছে, গত চার বছরের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টিকে তাদের ইচ্ছেমতো চালিয়েছেন। তার নিজের মনোনীত রিপাবলিকানদের কাছ থেকে তিনি ৯০ শতাংশের বেশি সমর্থন পেয়েছেন।
রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অন্যদের মধ্যে যে বিবাদ শুরু হয়েছে, ট্রাম্পের বিদায়ের পরে সেটি দলকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা এক বড় প্রশ্ন। সূত্র: বিবিসি
ডিএ/এসএস/
Leave a Reply