সিসি ক্যামেরায় মহাসড়কে যান চলাচল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে
- Update Time : ০৬:৫০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ নভেম্বর ২০২০
- / ১ Time View
আদালত প্রতিবেদক : পায়েল হত্যা মামলার রায়ে আজ আদালত পর্যবেক্ষনে বলেন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি ক্যামেরা) মহাসড়কে যান চলাচল মনিটরিংয়ে ব্যবস্থা করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যা বলাটা বোধহয় ভুল হবে নয়। অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
রোববার ১ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ পরিবহনের ড্রাইভার-হেলপার-সুপারভাইজারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন বিচারক।
পর্যবেক্ষণে মামলার বিচারক বলেন, সড়কগুলোতে প্রতিদিন প্রাণ দিচ্ছে বহু মানুষ। কোনোভাবেই যেন মৃত্যুর এ মিছিল থামছে না। এ মামলার ঘটনা দুঃখজনক ঘটনা।
বিচারক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে চিকিৎসা দেয়ার বদলে ২০১৮ সালের ২১ জুলাই অচেতন অবস্থায় ভাটেরচর ব্রিজ থেকে নিচে ফুলদি নদীতে ফেলে দেয় ড্রাইভার মো. জামাল হোসেন, বাসের সুপারভাইজার জনি ও বাসের হেলপার ফয়সাল। অথচ দুর্ঘটনায় আহত পায়েল তখনও জীবিত ছিল। পরে মুন্সীগঞ্জের ভাটেরচর ব্রিজের নীচের ফুলদী নদী থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এরকম অনেক পায়েল মারা যাচ্ছে যাদের কথা আমরা জানতে পারি না।
এ বিচারক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হত্যা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যা বলাটা বোধ হয় ভুল নয়। অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণেই এই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু নিছক কি দুর্ঘটনা নাকি হত্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মনে। তিনি বলেন, কিছু অদক্ষ অসচেতন গাড়ি চালকদের জন্য সড়কে মৃত্যু বাড়ছেই। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদেরও পিষে দিতে দ্বিধান্বিত হচ্ছে না কিছু বাস ড্রাইভার। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কিছু চিত্র তুলেও ধরেন বিচারক। তাহলে আর কবে সজাগ হবে আমরা? সড়কে মৃত্যু আমাদের যদি এখনো সচেতন না করে, তাহলে আর কবে সচেতন করবে?
সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আদালত বলেছেন, ‘তাহলে আর কবে আমরা সজাগ হব। সড়কে মৃত্যু আমাদের জন্য যদি সচেতন না করে, তাহলে আর কবে সচেতন করবে? নিহত ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল মেধাবী ছাত্র ছিলেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের জন্য যখন নিজেকে তিনি প্রস্তুত করেছিলেন, সেই মুহূর্তে বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারীর নির্মমতার শিকার হয়ে তাঁকে অকালেই প্রাণ দিতে হলো। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার হতাশায় নিমজ্জিত।’
আদালত রায়ে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। প্রথম পর্যবেক্ষণ : গাড়ি চালাতে দেয়ার আগে চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারী মাদক গ্রহণ করেছেন কি না, সে জন্য তাঁদের প্রত্যেককেই ডোপ টেস্ট করাতে হবে।
দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ: গাড়ির চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারীরা প্রায় যাত্রীদের সঙ্গে কর্কশ ও অভদ্র আচরণ করেন। গাড়ির চালক সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারী অবশ্যই যাত্রীদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। চালকসহ অন্যদের গাড়ি চালানোর বিষয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে আচরণসংক্রান্ত কাউন্সেলিং বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃতীয় পর্যবেক্ষণ: মহাসড়কের প্রতি তিন কিলোমিটার পরপর গাড়ির চালক চালকের সহকারী এবং সুপারভাইজার এবং যাত্রী সাধারণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আধুনিক বাথরুম স্থাপন করতে হবে। এ জন্য বাসমালিকদের সরকারের সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের নির্ধারিত হারে মাসিক চাঁদা প্রদান করতে হবে।
চতুর্থ পর্যবেক্ষণ : ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) মাধ্যমে মহাসড়কে যান চলাচলের ওপর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
পায়েল হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে আদালত বলেছেন, পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা পায়েলকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ভাটেরচর সেতু থেকে ফুলদী নদীতে ফেলে দেন। গোপন তদন্তে প্রকাশ পায় যে তখনো পায়েল বেঁচে ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে কোনো যাত্রী জানার আগেই আসামিরা বাসটি চালিয়ে ঢাকার দিকে চলে যান। ময়নাতদন্তে পরিষ্কার হয় যে নিহত পায়েল মারা গেছেন পানিতে ডুবে। লাশ গুম করার জন্যই আসামিরা পায়েলকে নদীতে ফেলে দেন।
এসএস//