Dhaka ০৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
মামলা হলেই গ্রেফতার নয়, তদন্তে দায় পাওয়া গেলে ব্যবস্থা: আইজিপি `অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্রকাঠামোই জাতীয়তাবাদের উপহার’-অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বিপুল আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনায় দেশব্যাপী বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত ‘জুলাই আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সহস্রাধিক লোকের সাক্ষ্য’ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষের অঙ্গীকার : প্রধান উপদেষ্টা সোয়াই নদীর পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে : ৫’শ মিটার কাজে বাঁধা দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডিইউজে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতীকি ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত: সর্বোচ্চ আদালতে ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও এতিমদের নিয়ে ককক্সবাজার ভ্রমনে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

মৃত্যুদন্ডের রায় রিভিউ চেয়ে কায়সারের আবেদন

  • Update Time : ১২:১৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০
  • / ২২ Time View

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদন্ডের রায় পুনঃবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেছেন।

বৃহস্পতিবার ২৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আসামি পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমীন।
তিনি জানান, ১৮ টি গ্রাউণ্ড দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ড সাজা থেকে খালাস চেয়ে এ রিভিউ আবেদন করা হয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২১ অক্টোবর দুপুরের পর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পায় ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পরোয়ানা পাঠানো হয়। দন্ডিত কায়সারকে মৃত্যু পরোয়ানা অবহিত করা হয়।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আনা তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল, আপিলে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও তা বহাল থাকে। কায়সারের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলেও তিনটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। এক সময়ের মুসলিম লীগ নেতা কায়সার ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। ‘কায়সার বাহিনী’ নামে দল গড়ে তিনি যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছেন, সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের মানুষ তাকে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসাবেই জানেন।

২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, কায়সার এতোটাই নগ্নভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন যে নিজের গ্রামের নারীদের ভোগের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হননি। সেই রয়ে সাতটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্যও দেন। আর একটি ঘটনায় ছিল নির্বিচারে হত্যার অভিযোগ। এছাড়া অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যায় সংশ্লিষ্টতার চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং তিনটি অভিযোগে আরও ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হওয়ার পর আপিলে আসা এটি নবম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো।

নিয়ম অনুযায়ী আসামি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ‘রায় রিভিউ’ আবেদন করতে পারেন। সে অনুযায়ী আসামি আজ রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।
২০১৩ সালের ১৫ মে ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে সেই রাতেই গ্রেফতার করা হয় মুসলিম লীগের এই সাবেক নেতাকে। বয়স ও স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালে তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিনও দেয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

বিচার শেষে ২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কায়সার। চলতি বছর আপিলের রায়ে তার মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। নিয়ম অনুযায়ীই সুপ্রিমকোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

ডিএ/এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মৃত্যুদন্ডের রায় রিভিউ চেয়ে কায়সারের আবেদন

Update Time : ১২:১৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদন্ডের রায় পুনঃবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেছেন।

বৃহস্পতিবার ২৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আসামি পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমীন।
তিনি জানান, ১৮ টি গ্রাউণ্ড দেখিয়ে মৃত্যুদণ্ড সাজা থেকে খালাস চেয়ে এ রিভিউ আবেদন করা হয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২১ অক্টোবর দুপুরের পর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পায় ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব ও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পরোয়ানা পাঠানো হয়। দন্ডিত কায়সারকে মৃত্যু পরোয়ানা অবহিত করা হয়।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আনা তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল, আপিলে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও তা বহাল থাকে। কায়সারের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলেও তিনটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। এক সময়ের মুসলিম লীগ নেতা কায়সার ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। ‘কায়সার বাহিনী’ নামে দল গড়ে তিনি যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছেন, সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের মানুষ তাকে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসাবেই জানেন।

২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, কায়সার এতোটাই নগ্নভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন যে নিজের গ্রামের নারীদের ভোগের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হননি। সেই রয়ে সাতটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্যও দেন। আর একটি ঘটনায় ছিল নির্বিচারে হত্যার অভিযোগ। এছাড়া অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যায় সংশ্লিষ্টতার চারটি অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং তিনটি অভিযোগে আরও ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হওয়ার পর আপিলে আসা এটি নবম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো।

নিয়ম অনুযায়ী আসামি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ‘রায় রিভিউ’ আবেদন করতে পারেন। সে অনুযায়ী আসামি আজ রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।
২০১৩ সালের ১৫ মে ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে সেই রাতেই গ্রেফতার করা হয় মুসলিম লীগের এই সাবেক নেতাকে। বয়স ও স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালে তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিনও দেয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

বিচার শেষে ২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কায়সার। চলতি বছর আপিলের রায়ে তার মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। নিয়ম অনুযায়ীই সুপ্রিমকোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

ডিএ/এসএস//