Dhaka ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার

গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতন মামলায় ৭ নির্দেশনাসহ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

  • Update Time : ০৩:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০
  • / ১ Time View

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবেদক: গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। ২৪ জুন প্রকাশিত ৩১ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম জানান, মানুষের অধিকার রক্ষা ও মানুষকে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে বলে রায়ে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রায়ে কমিশনকে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজার নির্যাতনের শুনানি করে ক্ষতিপূরণ বা যেকোনো সুপারিশ করতে মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ব্যারিষ্টার হালিম বলেন,বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মতো মারাত্নক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে কমিশন তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ/সচেতন নয়। এছাড়া দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং কমিশন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে মানবাধিকার কমিশনের প্রতি দেয়া আদালতের ৭ নির্দেশনা

১. খাদিজা নির্যাতন মামলার অভিযোগে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় এবং প্রতিকার দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।

২. কমিশন যেভাবে আদেশ দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না যে, এই আদেশগুলো কমিশনের আদেশ নাকি কোনো সদস্যের আদেশ। কোনো সদস্য এরূপ আদেশ আদৌ দিতে পারে কি না। মানবাধিকার কমিশন আইনের ১১(৩) এবং ২৮ ধারার বিধানে এ ধরণের আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।

৩. কমিশনকে এই মর্মে নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে যে, কমিশন যেন সঠিক বিধি মেনে সদস্য বা সদস্যবৃন্দের পূর্ণ নাম উল্লেখ করে আদেশ পাস করে এবং আশের নকল কপি যেন ভুক্তভোগী পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. কমিশন যে খসড়া বিধিমালাটি তৈরি করে রেখেছে তা অতি দ্রুত মানবাধিকার সংগঠনগুলার সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে।

৫. আইনের ১৬ এবং ১৮ ধারার বিধান অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান বা ক্ষেত্রমতো তদন্ত করে যথাযথ সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

৬. কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ-নির্দেশ পাত/বিবেচনা না করলে বা অবহেলা করলে সংবিধানের ১০২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট আবেদন করার জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

৭. কমিশন আইনগতভাবে একটি আধা-বিচারিক কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, ইহা অবশ্যই ন্যায়-বিচারের সকল নীতি মেনে চলতে বাধ্য। অত্র রায় প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজা নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি সম্পন্ন করে কী প্রতিকার, ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বা অন্য যেসব সুপারিশ প্রস্তাব করা যায়, তা করতে কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যদি শুনানিতে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনের ১৯ নম্বর ধারার বিধান মতে খাজিদা বরাবর যথাযথ ক্ষতিপূরণের সুপারিশ কমিশন করবে।

২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেয়। কিন্তু এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটের ওই রিটের শুনানি শেষে রায় হয়।
রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ।

ডিএ/এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতন মামলায় ৭ নির্দেশনাসহ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

Update Time : ০৩:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিবেদক: গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। ২৪ জুন প্রকাশিত ৩১ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম জানান, মানুষের অধিকার রক্ষা ও মানুষকে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে বলে রায়ে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রায়ে কমিশনকে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজার নির্যাতনের শুনানি করে ক্ষতিপূরণ বা যেকোনো সুপারিশ করতে মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ব্যারিষ্টার হালিম বলেন,বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মতো মারাত্নক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে কমিশন তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ/সচেতন নয়। এছাড়া দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং কমিশন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে মানবাধিকার কমিশনের প্রতি দেয়া আদালতের ৭ নির্দেশনা

১. খাদিজা নির্যাতন মামলার অভিযোগে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় এবং প্রতিকার দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।

২. কমিশন যেভাবে আদেশ দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না যে, এই আদেশগুলো কমিশনের আদেশ নাকি কোনো সদস্যের আদেশ। কোনো সদস্য এরূপ আদেশ আদৌ দিতে পারে কি না। মানবাধিকার কমিশন আইনের ১১(৩) এবং ২৮ ধারার বিধানে এ ধরণের আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।

৩. কমিশনকে এই মর্মে নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে যে, কমিশন যেন সঠিক বিধি মেনে সদস্য বা সদস্যবৃন্দের পূর্ণ নাম উল্লেখ করে আদেশ পাস করে এবং আশের নকল কপি যেন ভুক্তভোগী পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. কমিশন যে খসড়া বিধিমালাটি তৈরি করে রেখেছে তা অতি দ্রুত মানবাধিকার সংগঠনগুলার সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে।

৫. আইনের ১৬ এবং ১৮ ধারার বিধান অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান বা ক্ষেত্রমতো তদন্ত করে যথাযথ সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

৬. কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ-নির্দেশ পাত/বিবেচনা না করলে বা অবহেলা করলে সংবিধানের ১০২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট আবেদন করার জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

৭. কমিশন আইনগতভাবে একটি আধা-বিচারিক কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, ইহা অবশ্যই ন্যায়-বিচারের সকল নীতি মেনে চলতে বাধ্য। অত্র রায় প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজা নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি সম্পন্ন করে কী প্রতিকার, ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বা অন্য যেসব সুপারিশ প্রস্তাব করা যায়, তা করতে কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যদি শুনানিতে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনের ১৯ নম্বর ধারার বিধান মতে খাজিদা বরাবর যথাযথ ক্ষতিপূরণের সুপারিশ কমিশন করবে।

২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেয়। কিন্তু এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটের ওই রিটের শুনানি শেষে রায় হয়।
রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ।

ডিএ/এসএস//