‘আমার মা’ : এসপি মিজানুর রহমান শেলীর ফেসবুক ষ্ট্যাটাস থেকে
- Update Time : ১২:৫২:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০
- / ০ Time View
দিদারুল আলম দিদার : মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শেলী একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ সুপার, পিবিআই। ২৫তম বিসিএস-এর কর্মকর্তা ছাত্রজীবন থেকেই একজন সংগঠক। তিনি একজন লেখক ও কবি। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমেও সম্পৃক্ত। তার দরদী ও মানবিক গুন তার পরিচিত মহলে সমাদৃত। কয়েক মাস আগে প্রিয়তম পিতাকে হারিয়েছেন তিনি।
কুমিল্লার সমৃদ্ধ জনপদ ভারেল্লার কংশনগরে তার গ্রামের বাড়ী। বাবা মারা যাবার পর তার মা’ স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত ভিটা তথা গ্রামের বাড়ীতেই থাকতেন। মা’কে এসপি মিজান তার বাসায় আনতে চাচ্ছিলেন বেশ কয়েক মাস ধরেই। বাঙালী নারীদের স্বামীর ভিটা ও স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধের কথা সকলের জানা। মমতাময়ী মা’কে শহরে বাসায় আনতে পুত্র এসপি মিজানের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তার ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। যা হুবুহু তুলে ধরা হলো:-
“আমার মা
মা ডায়নিংয়ের চেয়ারে বসা। হঠাৎ বলে ওঠলেন, বাবা আর কয়দিন পর আমি যামু!
মেজাজ খারাপ করে বললাম, এবার যদি তুমি নাটক করো তাহলে এই ঘর আমি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেব!
মা তার ঘরের মায়া ছাড়তে পারছেন না। অথচ বাবা ছেড়ে গেছেন গত বছর ডিসেম্বরে চিরদিনের জন্য।
যে ঘর বাবা ছেড়ে গেছেন। যে ঘর মা আগলে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান, সেই ঘর রেগে বলেছি, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেব!
গত তিন দিন হলো চাকরির ছুটি নিয়ে এসেছি বাড়িতে এক শর্তে। মা রাজি হয়েছেন ঢাকায় বাসায় থাকবেন। গ্রামে একা আর থাকবেন না। বাড়ি আসি। বলি, নতুন কোন নাটক বাধবা না। এবার কিন্তু ফাইনাল!
ফাইনাল বললে মা চুপ থাকেন। কথা বলেন না। এই রুম ওই রুম করেন। মায়ের পেছন পেছন যাই, মা আলমারি খুলেন। চুপ করে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবেন। আলমারিতে জমানো কাপড়গুলো নাড়েন। লালচে দাগপড়া কাগজের ফাইল হাত দিয়ে মুছেন। একটু পর পাশে থাকা খাটে বসেন। হাতে একটা ছবি। ছবিটি দেখলাম। সাদাকালো প্রিন্টে বাবার যৌবনকালের ছবি। মুচ আছে। মাথায় ঠাসা চুল। আমাকে দেখিয়ে বললেন, তোমার বাবা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিলো! এটি
মায়ের সাদাসিধে কথা। আমি বললাম, আমার বাবা অনেক সুন্দর হবে এটাই স্বাভাবিক।
তিন দিন ধরে দেখলাম, বাবার এই ছবিটা তিনি তাঁর বালিশের নীচে রেখেছেন। কেও খাটে বসে বালিশ টান দিলে ছবিটি ভেসে আসে। পরে আবার ছবিটি লুকিয়ে রাখেন বালিশের নীচে।
গতকাল সারাটা দিনই আনমনা। কথা কম বলেন। আমাকে সামনে পেয়ে বললেন। বাপ আমি আর কয়দিন পরে আসি…! বললাম, না এবারই যেতে হবে। বউকে মোবাইলে বললাম, মা তো আসতে চাচ্ছেন না আবার। বউ বলল, মাকে পাজাকোলে করে ওঠাই নিয়ে আসো।
সামনে বসলে মা বলেন, এই জীবন অনেক কষ্টের বাবা! এই সংসার অনেক কষ্টে ঘুছানো! মা নিশ্বাস ছাড়েন বড়ো করে! আজ সকাল থেকে যেন মায়ের আর চলে না। আমার সাথে ঢাকা যাবে কি যাবে না। বিশাল ভূমিকা টেনে বসে আছেন। জানতে চাইলাম কি যাবা না? উত্তর দিলো, এই বাড়িটা ছেড়ে কি থাকতে পারব! আবার বললাম, মানে কি যাবা না? মা বললেন, যাবো।
মা আমার সাথে এখন গাড়িতে। ঢাকার পথে।
মা তাঁর জীবন সময়ে হলো একটা স্টেজ সন্তানের কাছে। কিন্তু তিনি যেন নারীরূপে বিমূর্তরূপ! তিনি আসেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপ নিয়ে। প্রতিবার ঘরবেঁধে, ঘরছেড়ে নাড়ীছেড়া নারী তিনি। শৈশবে বাবার ঘর, যৌবনে স্বামীর ঘর, আর বৃদ্ধা বয়সে সন্তানের ঘর!“
এসএস//