Dhaka ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজে’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ : জরুরি মামলা শুনানিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ জান প্রাণ দিয়ে জনআস্থা ধরে রাখতে হবে : তারেক রহমান বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক : সভাপতি রফিকুল মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক তোফাজ্জল কোটায় চাকরি : কুমিল্লার এসপি হচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে গুলি করা ছাত্রলীগ ক্যাডার নাজির সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মতিঝিল থানা ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে রিট বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সভাপতি রফিক, মহাসচিব সাত্তার সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল বুড়িচং জগতপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হয়ে গেছে একটি পরিবার

বিবাহ বিচ্ছেদ ও বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন

  • Update Time : ০৮:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
  • / ৪ Time View

মো: দিদারুল আলম: বিবাহ বিচ্ছেদ বলতে বিবাহ চুক্তির সমাপ্তি বুঝায়। ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে দম্পতির সর্বশেষ পন্থা যখন আর কোন মতেই একসাথে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশে বিয়ে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কতগুলো আইন আছে এর মধ্যে অন্যতম হল- বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ এবং মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১। এই সবগুলো আইন-ই ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক গঠিত এবং পরিচালিত। বিবাহ বিচ্ছেদ মুলতঃ দুই ভাবে হয়ে থাকে- ১) কোন পক্ষের মৃত্যু হলে ২) যে কোনো এক পক্ষের পদক্ষেপের মাধ্যমে। পদক্ষেপ আবার ৩ ভাবে হতে পারে- ক) স্বামী খ) স্ত্রী গ) পারস্পরিক সমঝোতা।
বাংলাদেশে ডিভোর্সের বিদ্যমান আইন
কারো স্ত্রী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে সে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে, কোন সময় পর্যন্ত তার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। যদি কারো স্বামী মারা যায় তবে স্ত্রীকে ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। আইন অনুযায়ী এই ইদ্দতকাল হচ্ছে ৪ মাস ১০ দিন। সে আসলে গর্ভবতী কিনা তা নিরূপণ করার জন্য এই সময়টুকু প্রয়োজন। গর্ভবতী হলে সন্তান জন্মগ্রহণের পর দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে।
যদি স্ত্রী এবং স্বামীর দাম্পত্য জীবন পূর্ণতা পাবার আগেই স্বামী মারা যায় তবে বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী এই ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে না।
তালাকদাতার অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। নাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কের নয় এমন কেউ অথবা তার পক্ষে তার পরিবারের কেউ ডিভোর্স দিতে পারবে না। এটি হচ্ছে ডিভোর্সের পূর্বশর্ত।
বাংলাদেশে বিদ্যমান মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী যে কেউই ডিভোর্স দিতে পারে। যেকোন পদ্ধতিতেই ডিভোর্স দিলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ৩ টি ধাপে তারা তাদের বিবাহের নিষ্পত্তি করতে হবে-১। লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে ২। সালিশি পরিষদে অংশগ্রহন করতে হবে ৩। ৯০ দিন অতিক্রম হওয়ার পর রেজিস্ট্রারের নিকট হতে ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে।
আমাদের দেশে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক তবে ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। এই নোটিশ আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক এবং না পাঠালে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী নোটিশ না পাঠালে তালাকদাতার ১০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা ১ বছরের জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। নোটিশ আপনি নিকাহ রেজিস্টার/কাজী, নোটারী অথবা আপনার উকিলের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন। এলাকার চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলর নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মধ্যে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবে। আইন অনুযায়ী দুই পক্ষের এই সালিশি পরিষদে একসাথে বসতে হবে। তবে মানুষ খুব কমই এই সালিশি পরিষদে অংশগ্রহণ করে। এই পরিষদে বসে তারা বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কেন একসাথে থাকবে না এবং আসলেই কি তাদের একসাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। চেয়ারম্যান/ কাউন্সিলর যদি দেখে যে আসলেই তাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব না সেক্ষেত্রে উনি সিদ্ধান্ত দিবেন যে ৯০ দিন পর তাদের ডিভোর্স কার্যকর হবে। যদি তাদের দুই জনের একজনও সালিশি পরিষদে না আসে তবে ধরে নেয়া হয় যে দুই জনই ডিভোর্সের পক্ষে। তখন নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন পর তাদের ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যায়। এই ৯০ দিন অপেক্ষাকে ইদ্দতকাল বলে। স্ত্রী যদি গর্ভাবস্থায় থাকে তবে যেটির সময় বেশি তার পরে তালাক কার্যকর হবে, অর্থাৎ যদি সন্তান ১০০ দিন পরে হয় তবে ১০০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে কিন্তু যদি সন্তান ৮০ দিন পরে হয় তবে ৯০ দিন (নির্ধারিত সময়) পরেই তালাক কার্যকর হবে। ডিভোর্স ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে তালাকদাতা ডিভোর্স প্রত্যাহার করতে পারে। ৯০ দিন পর যদি তাদের মনে হয় ডিভোর্স নেয়াটা ঠিক হয়নি, একসাথে থাকতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের পুনরায় বিয়ে করতে হবে। কডিভোর্স-এর আগে স্বামীকে অবশ্যই পুরো দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে যদি সে বিবাহের সময় পুরো দেনমোহর পরিষদ করে না থাকে, এটা স্ত্রীর অধিকার। ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পর তাদের রেজিস্ট্রারের নিকট ডিভোর্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে এবং সেটি সংগ্রহ করতে হবে।
স্বামী তার স্ত্রীকে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই ডিভোর্স দিতে পারে। অনেকের আবার প্রশ্ন থাকতে পারে স্বামী যদি রাগের মাথায় তালাক দিলাম বলে ফেলে তখন কি হবে। আইন ও ইসলাম অনুযায়ী এই ডিভোর্স গ্রহণযোগ্য হবে না।
স্ত্রী কয়েকটি নির্ধারিত কারণে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারে যা ডিভোর্স আইন, ১৮৬৯ এর ধারা ২ অনুচ্ছেদ দুই এ উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া যদি স্বামী তার স্ত্রীকে বিয়ের কাবিনামায় অধিকার দিয়ে থাকে যে স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবে তবেই আসলে স্ত্রী তার স্বামীকে নির্ধারিত কারণ ব্যাতিত ডিভোর্স দিতে পারবে। এই পদ্ধতিকে তালাক-এ-তৌহিদ বলে।

আইনে ডিভোর্স বা তালাক দেয়ার নিয়ম:
মূখে মূখে তিন বার “তালাক” শব্দটি উচ্চারণ করলে বা একসাথে “বায়েন তালাক” শব্দটি উচ্চারণ করলে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ সাথে সাথে কার্যকরী হয় না। এমনকি, মূখে উচ্চারণ ব্যতিত লিখিতভাবে তালাক দিলেও তা সাথে সাথে কার্যকরী হবে না।
১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টেশন আইন অনুযায়ী এখতিয়াভূক্ত বা সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিস্টার বা কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্ত্রী’কে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পৌরসভা চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে পাঠাতে হবে।
মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্ণ বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিস্কের স্বামী যে কোন সময় কোনরূপ কারণ ব্যতিরেকেই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর ক্ষমতা একচ্ছত্র, কিন্তু এজন্য আইনের বিধান মেনেই তা করতে হবে। বিধান না মানা শস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কে তালাক দেবার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারায় বলা হয়ে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে, তিনি যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্র সম্ভব চেয়ারম্যানকে (স্থানীয় ইউনিয়ন/পৌর চেয়ারম্যান/প্রশাসক) লিখিতভাবে নোটিশ দিবেন এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) প্রদান করবেন। একই আইনের ৭ (২) ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি নোটিশ প্রদানের এই বিধান লংঘন করেন তবে তিনি এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডনীয় হবেন।
৭ (৪) ধারা অনুযায়ী, নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং উক্ত সালিসী পরিষদ এই জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৭ (৩) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী হবে না। কিন্তু, তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে, তাহলে ৭(৫) ধারা অনুযায়ী গর্ভাবস্থা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবত হবে না।
উল্লেখ্য যে, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ -এর ৭(১) নং ধারা অনুযায়ী স্বামী যদি চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীকে নোটিশ প্রদান না করে তাহলে ৭ (২) ধারা অনুযায়ী স্বামী শাস্তি পাবে ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। উক্ত তালাক কার্যকর হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ প্রধান না করলে তালাক হবে না এই বিধান উল্লেখ নাই। এই বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি সীদ্ধান্ত রয়েছে। সিভিল রিভিশন নং ৬৯৮, ১৯৯২, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বনাম মোছা:হেলেনা বেগম ও অন্যান্য।
অন্যদিকে, সালিশী পরিষদ কতৃর্ক যদি সমঝোতা না হয় এবং নোটিশ দেবার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী যদি নোটিশ প্রত্যাহার না করে, তবে ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকরী হবে। এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রী কে ভরণপোষণও দিতে বাধ্য।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন ১৯৭৪ এর ৬ ধারা অনুসারে বিয়ের মতো তালাকও রেজিস্ট্রি করতে হয়। এখতিয়ারভূক্ত নিকাহ নিবন্ধক অর্থাৎ কাজী নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং ফি ব্যতিত রেজিস্ট্রির প্রত্যয়ন কপি প্রদান করবেন।

এসএস//

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিবাহ বিচ্ছেদ ও বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন

Update Time : ০৮:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০

মো: দিদারুল আলম: বিবাহ বিচ্ছেদ বলতে বিবাহ চুক্তির সমাপ্তি বুঝায়। ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে দম্পতির সর্বশেষ পন্থা যখন আর কোন মতেই একসাথে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশে বিয়ে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কতগুলো আইন আছে এর মধ্যে অন্যতম হল- বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ এবং মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১। এই সবগুলো আইন-ই ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক গঠিত এবং পরিচালিত। বিবাহ বিচ্ছেদ মুলতঃ দুই ভাবে হয়ে থাকে- ১) কোন পক্ষের মৃত্যু হলে ২) যে কোনো এক পক্ষের পদক্ষেপের মাধ্যমে। পদক্ষেপ আবার ৩ ভাবে হতে পারে- ক) স্বামী খ) স্ত্রী গ) পারস্পরিক সমঝোতা।
বাংলাদেশে ডিভোর্সের বিদ্যমান আইন
কারো স্ত্রী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে সে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে, কোন সময় পর্যন্ত তার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। যদি কারো স্বামী মারা যায় তবে স্ত্রীকে ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। আইন অনুযায়ী এই ইদ্দতকাল হচ্ছে ৪ মাস ১০ দিন। সে আসলে গর্ভবতী কিনা তা নিরূপণ করার জন্য এই সময়টুকু প্রয়োজন। গর্ভবতী হলে সন্তান জন্মগ্রহণের পর দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে।
যদি স্ত্রী এবং স্বামীর দাম্পত্য জীবন পূর্ণতা পাবার আগেই স্বামী মারা যায় তবে বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী এই ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে না।
তালাকদাতার অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। নাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কের নয় এমন কেউ অথবা তার পক্ষে তার পরিবারের কেউ ডিভোর্স দিতে পারবে না। এটি হচ্ছে ডিভোর্সের পূর্বশর্ত।
বাংলাদেশে বিদ্যমান মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী যে কেউই ডিভোর্স দিতে পারে। যেকোন পদ্ধতিতেই ডিভোর্স দিলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ৩ টি ধাপে তারা তাদের বিবাহের নিষ্পত্তি করতে হবে-১। লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে ২। সালিশি পরিষদে অংশগ্রহন করতে হবে ৩। ৯০ দিন অতিক্রম হওয়ার পর রেজিস্ট্রারের নিকট হতে ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে।
আমাদের দেশে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক তবে ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। এই নোটিশ আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক এবং না পাঠালে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী নোটিশ না পাঠালে তালাকদাতার ১০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা ১ বছরের জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। নোটিশ আপনি নিকাহ রেজিস্টার/কাজী, নোটারী অথবা আপনার উকিলের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন। এলাকার চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলর নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মধ্যে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবে। আইন অনুযায়ী দুই পক্ষের এই সালিশি পরিষদে একসাথে বসতে হবে। তবে মানুষ খুব কমই এই সালিশি পরিষদে অংশগ্রহণ করে। এই পরিষদে বসে তারা বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কেন একসাথে থাকবে না এবং আসলেই কি তাদের একসাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। চেয়ারম্যান/ কাউন্সিলর যদি দেখে যে আসলেই তাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব না সেক্ষেত্রে উনি সিদ্ধান্ত দিবেন যে ৯০ দিন পর তাদের ডিভোর্স কার্যকর হবে। যদি তাদের দুই জনের একজনও সালিশি পরিষদে না আসে তবে ধরে নেয়া হয় যে দুই জনই ডিভোর্সের পক্ষে। তখন নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন পর তাদের ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যায়। এই ৯০ দিন অপেক্ষাকে ইদ্দতকাল বলে। স্ত্রী যদি গর্ভাবস্থায় থাকে তবে যেটির সময় বেশি তার পরে তালাক কার্যকর হবে, অর্থাৎ যদি সন্তান ১০০ দিন পরে হয় তবে ১০০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে কিন্তু যদি সন্তান ৮০ দিন পরে হয় তবে ৯০ দিন (নির্ধারিত সময়) পরেই তালাক কার্যকর হবে। ডিভোর্স ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে তালাকদাতা ডিভোর্স প্রত্যাহার করতে পারে। ৯০ দিন পর যদি তাদের মনে হয় ডিভোর্স নেয়াটা ঠিক হয়নি, একসাথে থাকতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের পুনরায় বিয়ে করতে হবে। কডিভোর্স-এর আগে স্বামীকে অবশ্যই পুরো দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে যদি সে বিবাহের সময় পুরো দেনমোহর পরিষদ করে না থাকে, এটা স্ত্রীর অধিকার। ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পর তাদের রেজিস্ট্রারের নিকট ডিভোর্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে এবং সেটি সংগ্রহ করতে হবে।
স্বামী তার স্ত্রীকে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই ডিভোর্স দিতে পারে। অনেকের আবার প্রশ্ন থাকতে পারে স্বামী যদি রাগের মাথায় তালাক দিলাম বলে ফেলে তখন কি হবে। আইন ও ইসলাম অনুযায়ী এই ডিভোর্স গ্রহণযোগ্য হবে না।
স্ত্রী কয়েকটি নির্ধারিত কারণে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারে যা ডিভোর্স আইন, ১৮৬৯ এর ধারা ২ অনুচ্ছেদ দুই এ উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া যদি স্বামী তার স্ত্রীকে বিয়ের কাবিনামায় অধিকার দিয়ে থাকে যে স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবে তবেই আসলে স্ত্রী তার স্বামীকে নির্ধারিত কারণ ব্যাতিত ডিভোর্স দিতে পারবে। এই পদ্ধতিকে তালাক-এ-তৌহিদ বলে।

আইনে ডিভোর্স বা তালাক দেয়ার নিয়ম:
মূখে মূখে তিন বার “তালাক” শব্দটি উচ্চারণ করলে বা একসাথে “বায়েন তালাক” শব্দটি উচ্চারণ করলে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ সাথে সাথে কার্যকরী হয় না। এমনকি, মূখে উচ্চারণ ব্যতিত লিখিতভাবে তালাক দিলেও তা সাথে সাথে কার্যকরী হবে না।
১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টেশন আইন অনুযায়ী এখতিয়াভূক্ত বা সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিস্টার বা কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্ত্রী’কে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পৌরসভা চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে পাঠাতে হবে।
মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পূর্ণ বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিস্কের স্বামী যে কোন সময় কোনরূপ কারণ ব্যতিরেকেই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর ক্ষমতা একচ্ছত্র, কিন্তু এজন্য আইনের বিধান মেনেই তা করতে হবে। বিধান না মানা শস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কে তালাক দেবার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারায় বলা হয়ে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে, তিনি যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্র সম্ভব চেয়ারম্যানকে (স্থানীয় ইউনিয়ন/পৌর চেয়ারম্যান/প্রশাসক) লিখিতভাবে নোটিশ দিবেন এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) প্রদান করবেন। একই আইনের ৭ (২) ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি নোটিশ প্রদানের এই বিধান লংঘন করেন তবে তিনি এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডনীয় হবেন।
৭ (৪) ধারা অনুযায়ী, নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং উক্ত সালিসী পরিষদ এই জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৭ (৩) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী হবে না। কিন্তু, তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে, তাহলে ৭(৫) ধারা অনুযায়ী গর্ভাবস্থা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবত হবে না।
উল্লেখ্য যে, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ -এর ৭(১) নং ধারা অনুযায়ী স্বামী যদি চেয়ারম্যান এবং স্ত্রীকে নোটিশ প্রদান না করে তাহলে ৭ (২) ধারা অনুযায়ী স্বামী শাস্তি পাবে ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। উক্ত তালাক কার্যকর হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ প্রধান না করলে তালাক হবে না এই বিধান উল্লেখ নাই। এই বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি সীদ্ধান্ত রয়েছে। সিভিল রিভিশন নং ৬৯৮, ১৯৯২, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বনাম মোছা:হেলেনা বেগম ও অন্যান্য।
অন্যদিকে, সালিশী পরিষদ কতৃর্ক যদি সমঝোতা না হয় এবং নোটিশ দেবার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী যদি নোটিশ প্রত্যাহার না করে, তবে ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকরী হবে। এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রী কে ভরণপোষণও দিতে বাধ্য।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন ১৯৭৪ এর ৬ ধারা অনুসারে বিয়ের মতো তালাকও রেজিস্ট্রি করতে হয়। এখতিয়ারভূক্ত নিকাহ নিবন্ধক অর্থাৎ কাজী নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং ফি ব্যতিত রেজিস্ট্রির প্রত্যয়ন কপি প্রদান করবেন।

এসএস//